টমাস এডওয়ার্ড লরেন্স
টমাস এডওয়ার্ড লরেন্স | |
---|---|
ডাকনাম | লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া |
আনুগত্য | যুক্তরাজ্য |
সেবা/ | ব্রিটিশ সেনাবাহিনী, রয়েল বিমান বাহিনী |
কার্যকাল | ১৯১৪-১৯১৮, ১৯২৩-১৯৩৫ |
পদমর্যাদা | লেফটেন্যান্ট কর্নেল |
পুরস্কার | অর্ডার অফ বাথ-এর কম্প্যানিয়ন ডিস্টিংগুইশ্ড সার্ভিস অর্ডার লেজিওঁ দনর |
টমাস এডওয়ার্ড লরেন্স (১৫ই আগস্ট, ১৮৮৮ - ১৯শে মে, ১৯৩৫) একজন ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ব বিশারদ, সামরিক নীতি নির্ধারক এবং লেখক। তাকে লরেন্স অব অ্যারাবিয়া নামেও ডাকা হয়, তিনি নিজ নামের আদ্যক্ষর টি.ই. ও বেশ পছন্দ করতেন। তিনি ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ সামরিক তৎপরতা চালিয়েছেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে উসমানীয় খিলাফতের বিরুদ্ধে অভিযানে আকাবা বিজয়। সে সময়ে মধ্য প্রাচ্যের সামরিক তৎপরতা নিয়ে লিখেই তিনি খ্যাতি পেয়েছেন। তাকে মধ্যপ্রাচ্য তথা আধুনিক আরব বিশ্বের জনক বলা হয়।
জীবনী
[সম্পাদনা]প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]লরেন্সের বাবা স্যার টমাস চ্যাপম্যান এবং মা সারা ম্যাডেন। ম্যাডেন ওয়েস্টমিথে চ্যাপম্যানের কন্যাদের পরিচারিকা ছিলেন। এই পরিচারিকাকে নিয়েই চ্যাপম্যান আয়রল্যান্ড থেকে পালিয়ে আসেন। তাদের ঘরে পাঁচ সন্তানের জন্ম হয় যার মধ্যে লরেন্স দ্বিতীয়। ১৮৯৬ সালে পরিবারটি অক্সফোর্ডে স্থায়ী হয় এবং লরেন্স সেখানেই হাই স্কুল এবং জেসাস কলেজে পড়াশোনা করে। তার প্রথম আগ্রহের বিষয় ছিল মধ্যযুগের সামরিক স্থাপত্য। ফ্রান্স, সিরিয়া এবং ফিলিস্তিনে ক্রুসেড যোদ্ধাদের সামরিক দুর্গ বিষয়ে অধ্যয়ন করে তিনি একটি অভিসন্দর্ভ লিখেন যা তাকে ১৯১০ সালে ইতিহাসে প্রথম শ্রেণীতে সম্মান সহ ডিগ্রি এনে দেয়। ১৯৩৬ সালে তার এই অভিসন্দর্ভটি "ক্রুসেডার ক্যাসেল্স" নামে প্রকাশিত হয়। অবশ্য বইটি বেনামে প্রকাশিত হয়েছিল। অক্সফোর্ডের প্রত্নতত্ত্ববিদ ডেভিড জর্জ হোগরাথের অনুগ্রহে তিনি ম্যাগডালেন কলেজ থেকে ভ্রমণ ফেলোশিপ পান। এই ফেলোশিপ নিয়ে ইউফ্রেটিস নদী তীরের কার্কেমিশে যান। উদ্দেশ্য ছিল সেখানে হিত্তীয়দের ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনা খননের মাধ্যমে উদ্ধার করা। ১৯১১ থেকে ১৯১৪সাল পর্যন্ত তিনি এই প্রকল্পে কাজ করেন। প্রথমে হোগরাথের অধীনে কাজ করলেও পরবর্তীকালে ছিলেন লিওনার্ড উলির অধীনে। যখন কোন কাজ থাকতো না তখন তিনি নিজের খেয়ালে আশেপাশের অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতেন, ভাষা এবং জনগণ সম্বন্ধে ধারণা লাভের জন্য।
১৯১৪ সালের প্রথম দিকে লিওনার্ড উলি এবং ক্যাপ্টেন এস এফ নিউকম্বের সাথে সিনাই-এর উত্তরাঞ্চলে অভিযানে বের যান। এর অবস্থান সুয়েজের পূর্বদিকে তুর্কী সীমান্তের কাছে। বৈজ্ঞানিক অভিযান হলেও এর মাধ্যমে মূলত গাজা থেকে আকাবা পর্যন্ত মানচিত্র নির্মাণের প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছিল। অর্থের যোগান দিয়েছিল "প্যালেস্টাইন এক্সপ্লোরেশন ফান্ড"। এই মানচিত্র নির্মাণের কাজ পরবর্তীকালে তাকে প্রভূত সহায়তা করেছিল। এই অভিযানের বিস্তারিত বর্ণনা ও কার্যকারিতা লিখেন লরেন্স ও উলি একসাথে। এটি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে এবং ১৯১৫ সালে "দ্য ওয়াইল্ডারনেস অফ জিন" নামে প্রকাশিত হয়।
বিশ্বযুদ্ধের সূচনা
[সম্পাদনা]বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে পর লরেন্স লন্ডনের যুদ্ধ বিষয়ক দপ্তরের মানচিত্র বিভাগে বেসামরিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার দায়িত্ব ছিল সিনাইয়ের এমন একটি মানচিত্র প্রস্তুত করা যা যুদ্ধক্ষেত্রে কাজে দেবে। ১৯১৪ সালের মধ্যে তাকে লেফটেন্যান্ট হিসেবে কায়রোতে বদলি করা হয়। আরব সংক্রান্ত বিষয়াদিতে অভিজ্ঞ ব্যক্তির যথেষ্ট অভাব ছিল, তার উপর লরেন্স স্বয়ং তুর্কী অধিকৃত আরব ভূমিতে ভ্রমণ করে এসেছেন। তাই কায়রোতে তার কাজের মধ্যে ছিল গোয়েন্দা তৎপরতায় সাহায্য করা, বন্দীদের সাক্ষাৎকার নেয়া, মানচিত্র অঙ্কন, শত্রু সীমানার ভিতরে অবস্থানরত গুপ্তচরদের থেকে আসা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং তুর্কী সেনাবাহিনীর উপরে একটি হ্যান্ডবুক তৈরী। তার এখানকার কার্যকাল প্রায় এক বছর। ১৯১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে তার দু ভাই, উইল ও ফ্র্যাংক ফ্রান্সে যুদ্ধাবস্থায় মারা যায়। লরেন্স বুঝতে পারেন, সেখানকার থেকে পশ্চিম অনেক বেশি উত্তাল।
সে সময়ে মধ্য প্রাচ্যে সামরিক তৎপরতা পরিচালনার জন্য ব্রিটিশরা মিশরকে ব্যবহার করতো। কায়রোতেই ছিল সামরিক বাহিনীর দপ্তর। ব্রিটিশ রাজনৈতিক কূটনীতিবিদ লরেন্সকে মধ্য প্রাচ্যে যাবার জন্য রাজী করান। লরেন্সও বুঝতে পেরেছিলেন, তুরস্কের সাথে জার্মানির মৈত্রীর রহস্য ও অগ্রগতি আবিষ্কার করতে হলে এর বিকল্প নেই। এ উদ্দেশ্যে ১৯১৬ সালের অক্টোবরে লরেন্স কূটনীতিক স্যার রোনাল্ড স্টর্সের সাথে এক অভিযানে আরবে যান। মক্কার আমীর হুসাইন ইবন আলি জুন মাসে তুর্কীদেরবিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন যাকে আরব বিদ্রোহ নামে অভিহিত করা হয়। স্ট্রর্স ও লরেন্স হুসাইনের এক পুত্র আবদুল্লাহ'র সাথে কথা বলে এবং অপর পুত্র ফাইসালের সাথে বিস্তারিত আলাপ করার অনুমতি পায়। ফাইসাল মদিনার দক্ষিণ-পূর্বে এক আরব বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিল। নভেম্বরমাসে লরেন্স কায়রোতে ফিরে এসে সেখানকার সামরিক কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, আরব গোত্রগুলোর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে স্বর্ণ এবং সম্পদের বিনিময়ে তাদের মন জয় করতে হবে এবং তাদেরকে স্বাধীন আরবের স্বপ্ন দেখাতে হবে। কায়রো থেকে তিনি মদিনার দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং সেখানে গিয়ে ফাইসালের সেনাবাহিনীতে লিয়াজোঁ ও রাজনৈতিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন।
মরুভূমিতে গেরিলা তৎপরতা
[সম্পাদনা]লরেন্সই একমাত্র কর্মকর্তা নন যিনি আরব বিদ্রোহে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। কিন্তু, বিশাল আরব উপদ্বীপে নিজের বৃত্তের মধ্যে তিনি অচিরেই প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। তিনি ছিলেন সেখানকার আরব বিদ্রোহের মস্তিষ্ক। তিনি বিচ্ছিন্ন আরব গোত্রগুলোকে সংঘটিত করেছেন এবং কায়রোর সাথে তাদের যোগাযোগের ভিত রচনা করেন সামরিক কুশলী হিসেবে সফলতা অর্জন করেন। তার সেকেন্ড ফ্রন্ট তুর্কীদের যুদ্ধে ব্যস্ত রাখে এবং অন্য স্থানে যুদ্ধে অংশ নেয়া থেকে বিরত রাখে। মদিনা থেকে দামেস্ক পর্যন্ত রেল সংযোগ অচল করে দেয়া ছিল তার গেরিলা তৎপরতার মুখ্য উদ্দেশ্য। এহেন কাজে লরেন্স এতোটাই সফল হয়েছিলেন যে আরব বেদুইনদের কাছে তিনি "আমির ডায়নামাইট" নামে পরিচিত ছিলেন। এ সফলতার মূলে ছিল, নেতৃত্বের ক্ষমতা ও বাচনভঙ্গির মাধ্যমে মরুভূমির বিভিন্ন অঞ্চলের শেখদের সহায়তা অর্জন, একটি একীভূত আরব জাতির স্বপ্ন দেখা যা আরব রাজাদের স্বপ্নেরই শামিল, যখন আরব বেদুইন যোদ্ধাদের উৎসাহে ভাটা পড়তো তখন নিজের উদাহরণ দিয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করা, যুদ্ধে পরাজিত শত্রুদের অর্থ-সম্পদ তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া এবং তাদেরকে বিভিন্ন ঘুষের প্রলোভন দেখানো।
লোহিত সাগরের সর্ব উত্তর প্রান্তে অবস্থিত আকাবা বিজয় ছিল লরেন্সের নেতৃত্বে আরব গেরিলাদের প্রথম বড় ধরনের সাফল্য। দীর্ঘ দুই মাস একটানা যাত্রার শেষে ১৯১৭ সালের ৬ই জুলাই তারা এটি দখল করে। একই সময় জেনারেল স্যার এডমান্ড অ্যালেনবাই তার মিত্রসেনা নিয়ে জেরুজালেমের দিকে যাত্রা করার পরিকল্পনা করছিলেন। এই যাত্রার সফলতা ছিল অনিশ্চিত। লরেন্স সে সময় আরব গেরিলাদের প্রচেষ্টার সাথে জেরুজালেমগামী সৈন্যদের একীকরণের প্রচেষ্টা চালান। এ বছরের নভেম্বরে তিনি আরব বেশ ধারণ করে দারা নগরে শত্রুর অবস্থান সম্বন্ধে ধারণা লাভের চেষ্টা করছিলেন। এ সময় তুর্কী সেনারা তাকে আটক করে। সেনা দপ্তরে তিনি সমকামী বর্বরতার শিকার হন। অবশ্য পরিশেষে সেখান থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই ঘটনা তার মনে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে যার কবল থেকে জীবনে কখনও মুক্তি পাননি। পরবর্তী মাসে অবশ্য জেনারেলের সাথে জরুজালেমের বিজয় প্যারেডে অংশ নেন। তার সহায়তায় ফাইসালের বাহিনী আরও উত্তরে তাদের বিজিত এলাকার সীমা বৃদ্ধি করে করতে সক্ষম হয়। তাকে উন্নীত করা হয় লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদায়। সাথে লাভ করেন ডিস্টিংগুইশ্ড সার্ভিস অর্ডার (ডিএসও)।
১৯১৮ সালের অক্টোবরের মধ্যে আরব বাহিনী দামেস্কের কাছাকাছি পৌঁছে যায়, কিন্তু লরেন্স মানসিক ও শারীরিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়েন। অসংখ্যবার আহত হন। মাঝেমাঝে আটক হওয়ার কারণে নির্যাতনের শিকার হন। এছাড়া আবহাওয়া ও ক্ষুধার কারণে তার স্বাস্থ্যও ভেঙে পড়ে। এছাড়া সামরিক কারণে শত্রুর উপর যে নির্যাতন করতে হতো তা তাকে আরও অসুস্থ করে তোলে। যুদ্ধ এবং নৃশংসতা তাকে ভাবিয়ে তোলে। দামেস্ক জয়ের পর সেখানে তিনি আরবদের মধ্যে যে বিচ্ছিন্ন বাকবিতণ্ডা লক্ষ্য করেছেন এবং তাদের অভ্যন্তরীন কোন্দলের যে পরিচয় পেয়েছেন তা থেকে তিনি মনে করেছিলেন, আরবরা একটিমাত্র জাতি গঠনে পারঙ্গম নয়। ১৯১৬ সালে যে সাইক্স-পিকো চুক্তি করা হয় তা থেকেও বোঝা যাচ্ছিল আরব অঞ্চলে ব্রিটিশ ও ফরাসি প্রভাব বজায় থাকবে। বিশেষভাবে সম্মানিত হওয়া সত্ত্বেও হতাশ লরেন্স স্বদেশের উদ্দেশ্যে আরব ত্যাগ করেন। ১৯১৮ সালের ৩০শে অক্টোবর তিনি অর্ডার অফ বাথ এবং ডিএসও গ্রহণে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। কারণ ছিল রাজা জর্জ ৫-এর সিদ্ধান্ত, "বক্সটি আমার নিজের হাতেই রাখছি"। এর দ্বারা তিনিই আরব অঞ্চলে প্রভাব বজায় রাখার কথাই ঘোষণা করেছিলেন। ১৯১৯ সালের ৩১শে জুলাই আবার লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
যুদ্ধপরবর্তী তৎপরতা
[সম্পাদনা]যুদ্ধ থেকে ফিরে লরেন্সের মূল কাজ ছিল কূটনীতিক, শিক্ষার্থী এবং গবেষক হিসেবে। ১৯১৯ সালে প্যারিস শান্তি সম্মেলনে আরবের স্বাধীনতার জন্য লবিং করেন এবং এরপর সিরিয়া ও লেবাননকে সমগ্র আরব থেকে পৃথকীকরণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। অবশ্য এ অবস্থান ছিল অনেকটাই দুর্বল। একইসাথে তিনি নিজের যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করার কাজ চালিয়ে যান। এ কাজ ছিল অক্সফোর্ডের অল সোল্স কলেজের ফেলোশিপ নিয়ে করা গবেষণার অংশ। সাত বছরের জন্য এ ফেলোশিপ লাভ করেছিলেন এবং তথ্য জোগাড়ের কাজ করেন ১৯১৯ সালের নভেম্বরে। এরই মধ্যে তার যুদ্ধ কাহীনী জনপ্রিয় হয়ে উঠে। লাওয়েল টমাস নামক এক মার্কিন যুদ্ধকালীন সাংবাদিক ও প্রতিবেদক তার উপরে বিশেষ সচিত্র বকতৃতামালা প্রকাশ করেন যার নাম ছিল, "উইথ অ্যালেনবাই ইন প্যালেস্টাইন অ্যান্ড লরেন্স ইন অ্যারাবিয়া"। এই সচিত্র প্রতিবেদন তাকে পরিচিত করে তোলে এবং জনপ্রিয় বেশ কিছু অনুষ্ঠানের জন্ম দেয়।
আরব বিষয়ক উপদেষ্টা হওয়ার আহ্বান
[সম্পাদনা]লরেন্স তার বই লেখার কাজ করে যাচ্ছেন এমন সময় আবার মধ্যপ্রাচ্যে তার যাক পড়ে। এবার ঔপনিবেশিক মন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের আরব বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে। কায়রোতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার পর দেখা যায়, যুদ্ধের সময় লরেন্স আরবদের কাছে যে প্রতিজ্ঞাগুলো করেছিলেন তার অধিকাংশই রক্ষিত হয়নি। এ কারণে লরেন্স সরকারের পরবর্তী সকল পদ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। ১৯২২ সালের ২৮শে আগস্ট তিনি নিজের সহকর্মী এয়ার মার্শাল স্যার হিউ ট্রেঞ্চার্ডের সহায়তায় রাজকীয় বিমান বাহিনীতে "জন হিউম রস" নামে তালিকাভুক্ত থাকেন। এ সময়ের মধ্যে যুদ্ধের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লেখা তার বই "দ্য সেভেন পিলার্স অফ উইজডম"-এর পুনর্নিরিক্ষীত আটটি কপি প্রস্তুত করেন। অক্সফোর্ড টাইম্স থেকে এর প্রকাশের কথা। বিমান বাহিনীর এয়ারক্রাফ্টম্যান হিসেবে তার বেতন ছিল দুই শিলিংয়ের সামান্য বেশি, আর ঔপনিবেশিক অফিসে তাকে ১,২০০ পাউন্ড বেতনের কথা বলা হয়। কিন্তু বইটি প্রকাশ করে যেতে হলে তাকে ঔপনিবেশিক অফিসের চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে গেলে আরেকটি বই লেখার উপাদান সংগ্রহ করতে পারেন তিনি। আরেকটি বইয়ের তথ্য সংগ্রহে তিনি সফল হয়েছিলেন। লন্ডনের ডেইলি এক্সপ্রেসে তার এই চাকুরি বদলের খবর প্রথম প্রকাশিত হয় এবং রাজকীয় বিমান বাহিনী তাকে পরবর্তী মাসের শুরুতেই অব্যাহতি দেয়।
প্রাইভেট হিসেবে
[সম্পাদনা]কিন্তু এ ধরনের চাকুরি বদল তার জন্য সহজ ছিলনা। তাই অন্য একটি চাকরি খুঁজতে শুরু কতরেন। যুদ্ধ বিষয়ক দপ্তরে তার বন্ধু স্যার ফিলিপ চেটউডের সহায়তায় ১৯২৩ সালের ১২ই মার্চ রয়েল ট্যাংক কর্পস-এ প্রাইভেট (সাধারণ সৈনিক) হিসেবে যোগ দেন। এর আগে বিমান বাহিনীতেও তিনি প্রাইভেট ছিলেন। বেশ আশ্চর্যের বিষয়, এক সময়ের লেফটেন্যান্ট কর্নেল লরেন্স হলেন প্রাইভেট। প্রথমে বিমান বাহিনীতে প্রাইভেট হিসেবে তিনি জন হিউম রস নামধারণ করেছিলেন, আর এবার ট্যাংক কর্পসে প্রাইভেট হিসেবে "টি ই শ" নাম ধারণ করলেন। তার মতে হঠাৎই এ নামটি তার মনে আসে। এর সাথে অবশ্য একটি কাকতাল রয়েছে। ১৯২২ সালেই লরেন্স জর্জ বার্নার্ড শ'র সাথে পরিচিত হন এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। আর ১৯২৭ সালেই লরেন্স আইনগতভাবে টি ই শ নামটি গ্রহণ করেছিলেন। ডর্সেটের কোভিংটন ক্যাম্পে রিপোর্ট করার মাধ্যমে তিনি "ক্লাউড হিলের" পাশে একটি বাড়ি পান। এ বাড়িতেই জীবনের বাকিটা সময় ছিলেন। বন্ধুদের পরামর্শে ডর্সেটে বসে তিনি সেভেন পিলার্স বইয়ের আরেকটি সংস্করণ প্রস্তুত করেন। এই বন্ধুদের মধ্যে বার্নার্ড শ'ও ছিলেন। ১৯২৬ সালে প্রকাশিত এই সংস্করণটির মাত্র ১২৬টি কপি প্রকাশিত হয় এবং সবগুলোও বিশেষভাবে চিত্রিত ছিল।
শেষ জীবন
[সম্পাদনা]লরেন্সের শেষ জীবন কেটেছে রাজকীয় বিমান বাহিনীর সিপ্লেন এবং সমুদ্রগামী জাহাজকে ঘিরে। অবশ্য তাকে উড়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। এয়ারক্রাফ্টম্যান হিসেবে তিনি ইংলিশ চ্যানেল থেকে উত্তর সাগর অবধি গিয়েছেন। এসময় উচ্চ গতিসম্পন্ন সিপ্লেন-টেন্ডার ওয়াটারক্রাফ্টের উপর কাজ করেন এবং এগুলো ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারকারী ম্যানুয়াল প্রস্তুত করেন। ১৯৩৫ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি বিমান বাহিনীর চাকুরি ছেড়ে ক্লাউড্স হিলে ফিরে আসেন। ৪৬ বছর বয়সী লরেন্সের মনে ভবিষ্যতের স্বপ্ন যা মূলত নতুন নতুন প্রকাশনাকে ঘিরে। অবশ্য তার মনে এক ধরনের শূন্যতা বিরাজ করছিল। তার বন্ধু লেডি অ্যাস্টরকে এ সম্বন্ধে বলেছিলেন, "there is something broken in the works . . . my will, I think"। ১৩ই মে এক মোটর গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হন। দুর্ঘটনার পর আর জ্ঞান ফিরেনি এবং ৬ দিন পর মৃত্যুবরণ করেন। তার ভবিষ্যতের সকল সমস্যার অবসান হয় সেই সাথে।
সাহিত্যকর্ম
[সম্পাদনা]যৌনজীবন
[সম্পাদনা]সংস্কৃতিতে লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া
[সম্পাদনা]চলচ্চিত্র
[সম্পাদনা]- ১৯৬২ সালে ডেভিড লিন পরিচালিত ইংরেজ চলচ্চিত্র লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া মুক্তি পায়। লরেন্সের জীবনী নিয়ে নির্মিত এই মহাকাব্যিক চলচ্চিত্রে লরেন্সের চরিত্রে অভিনয় করেন পিটার ও'টুল। অবশ্য টুলের উচ্চতা বাস্তবের লরেন্স থেকে বেশি।
- ১৯৯০ সালে আ ডেঞ্জারাস ম্যান: লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া নামে একটি টেলিভিশন চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এতে লরেন্সের চরিত্রে অভিনয় করেন "রাল্ফ ফিয়েনেস"। তার উচ্চতাও বাস্তবের লরেন্সের থেকে বেশি।
- ১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত টেলিভিশন সিরিজ "দ্য ইয়াং ইন্ডিয়ানা জোন্স ক্রনিক্ল"-এ লরেন্সের চরিত্র রয়েছে। সেখানে এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন জোসেফ বেনেট ও ডগলাস হেনশল।
- ১৯৮২ সালের টেলিভিশন সিরিজ "ভয়েজার্স!"-এ লরেন্সের চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাডসন স্কট।
রচনাবলী
[সম্পাদনা]লরেন্সের লেখা
[সম্পাদনা]- সেভেন পিলার্স অফ উইজডম - আরব বিদ্রোহের সময় লরেন্সের অভিজ্ঞতা
- রিভল্ট ইন দ্য ডেজার্ট - সেভেন পিলার্স অফ উইজডমের সংক্ষেপিত রূপ।
- দ্য মিন্ট - রাজকীয় বিমান বাহিনীতে কর্মজীবন নিয়ে
- ক্রুসেডার ক্যাসেল্স - লরেন্সের অক্সফোর্ড অভিসন্দর্ভ
- দ্য অডিসি অফ হোমার - গ্রিক থেকে লরেন্সের অনুবাদ
- দ্য ফরেস্ট জায়ান্ট - অঁদ্রি লা ক্যোবুর ফরাসি ভাষার উপন্যাসের অনুবাদ
- দ্য লেটার্স অফ লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া - ম্যালকম ব্রাউন কর্তৃক নির্বাচিত ও সম্পাদিত
- দ্য লেটার্স অফ টি ই লরেন্স - ডেভিড গার্নেট সম্পাদিত
লরেন্স সম্বন্ধে লেখা
[সম্পাদনা]- লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া অ্যান্ড হিজ ওয়ার্ল্ড - রিচার্ড পার্সিভাল গ্রেভ্স লিখিত
- লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া: দ্য ব্যাট্ল ফর দ্য অ্যারাব ওয়ার্ল্ড - জেমস হস পরিচালিত
- টি ই লরেন্স বাই হিজ ফ্রেন্ড্স - লরেন্সকে যারা চিনতেন তাদের মতামত
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- Lawrence, T(homas) E(dward) - এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা ২০০৭ ডিভিডি সংস্করণ
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- telawrence.net: Lawrence's writings online
- Site dedicated to Lawrence
- Fact file from Lawrence biographer
- The T.E. Lawrence Society
- Lawrence of Arabia's Dorset
- T.E. Lawrence: The Enigmatic Lawrence of Arabia article by O'Brien Browne
- Who was S.A.?, by Yagitani Ryôko
- Lawrence of Arabia: True and false (an Arab view) by Lucy Ladikoff ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে
- ১৮৮৮-এ জন্ম
- ১৯৩৫-এ মৃত্যু
- ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ
- ওয়েল্শীয় যোদ্ধা
- ব্রিটিশসামরিক সেনা কর্মকর্তা
- লেজিওঁ দনর প্রাপক
- এশিয়ার পরিব্রাজক
- আরবের পরিব্রাজক
- গেরিলা যুদ্ধ
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ব্রিটিশ সামরিক কর্মকর্তা
- গেরিলা যুদ্ধ তৎপরতার তাত্ত্বিক
- ২০শ শতাব্দীর ব্রিটিশ লেখক
- ২০শ শতাব্দীর অনুবাদক
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা
- আইরিশ বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ব্যক্তি
- ডিস্টিংগুইসড সার্ভিস অর্ডার কোম্পানিয়ন্স