বিষয়বস্তুতে চলুন

মণিকর্ণিকা ঘাট

স্থানাঙ্ক: ২৫°১৮′৩৯.১৩৪″ উত্তর ৮৩°০′৫০.৭০৮″ পূর্ব / ২৫.৩১০৮৭০৫৬° উত্তর ৮৩.০১৪০৮৫৫৬° পূর্ব / 25.31087056; 83.01408556
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মণিকর্ণিকা ঘাট
২০০৭ সালে মানিকরণিকা ঘাট শীর্ষে বাবা মাশন নাথ মন্দির
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাবারাণসী জেলা
অবস্থান
অবস্থানবারাণসী
রাজ্যউত্তর প্রদেশ
দেশভারত
স্থানাঙ্ক২৫°১৮′৩৯.১৩৪″ উত্তর ৮৩°০′৫০.৭০৮″ পূর্ব / ২৫.৩১০৮৭০৫৬° উত্তর ৮৩.০১৪০৮৫৫৬° পূর্ব / 25.31087056; 83.01408556

মনিকর্ণিকা ঘাট (হিন্দি: मणिकर्णिका घाट) ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বারাণসী শহরে গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত শ্মশান ঘাট। বারাণসীর দশাশ্বমেধ ঘাট এবং সিন্ধিয়া ঘাটের মধ্যবর্তী স্থানে এর অবস্থান। হিন্দুধর্ম মতে এই ঘাটে দেবী সতির কর্ণ কুন্তল বা কানের দুল পতিত হয়েছিল। সংস্কৃত ভাষায় কর্ণ কুন্তলকে 'মণিকর্ণ' বলা হয়। 'মণিকর্ণ' শব্দ হতে এই ঘাটের নাম উদ্ভূত হয়েছে।[][] হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মণিকর্ণিকা ঘাটের শ্মশানে মৃতদেহ দাহ করা হলে মৃতের আত্মা মোক্ষ অর্জন করে বা পুনর্জন্মের চক্র হতে মুক্তিলাভ করে।[] একারণে এই ঘাটটি প্রবীণ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি বিশেষ তীর্থস্থান হিসেবে সুপরিচিত।[] এছাড়াও এই ঘাটে বারাণসীর হিন্দুবংশ সমূহের নিবন্ধন সংরক্ষিত আছে।

পৌরাণিক ইতিহাস

[সম্পাদনা]
১৯২২ সালে মানিকর্ণিকা ঘাটে সারিবদ্ধ মন্দিরের দৃশ্য। বাম থেকে ডানে: বাবা মাশন নাথ মন্দির, নিম্ন স্তর: তারকেশ্বর এবং রত্নেশ্বর মন্দির, উচ্চ স্তর: ত্রিপুর সুন্দরী ও গণেশ মন্দির

এটি বারাণসীর অন্যতম প্রাচীন ঘাট। ঘাটটি হিন্দু ধর্মে সম্মানিত ও পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত। পঞ্চম শতাব্দীর গুপ্ত লিপিতে ঘাটটির কথা উল্লেখ রয়েছে।[] হিন্দু পুরাণ অনুসারে সত্য যুগের কোনও এক সময়ে শিবের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দক্ষ রাজা বৃহস্পতির নামে এক যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। কন্যা সতী দেবী তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে 'যোগী' শিবকে বিবাহ করায় দক্ষ ক্ষুব্ধ ছিলেন। দক্ষ শিব ও সতী ছাড়া প্রায় সকল দেব-দেবীকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। শিবের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সতী দেবী শিবের অনুসারীদের সাথে নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। দক্ষ দেবী মহামায়া কে কথা দিয়ে ছিলেন তিনি তার কোন রূপ অপমান করলে তিনি তাকে ত্যাগ করবেন, কিন্তু সতী আমন্ত্রিত অতিথি না হওয়ায় তাকে যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া হয়নি। অধিকন্তু দক্ষ শিবকে অপমান করেন। সতী তার স্বামীর প্রতি পিতার এ অপমান সহ্য করতে না পেরে যোগবলে আত্মাহুতি দেন। শোকাহত শিব রাগান্বিত হয়ে দক্ষর যজ্ঞ ভণ্ডুল করেন এবং সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। অন্যান্য দেবতা অনুরোধ করে এই নৃত্য থামান এবং বিষ্ণুদেব তার সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর মৃতদেহ ছেদন করেন। এতে সতীর দেহ ৫১ খণ্ডে বিভক্ত হয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পড়ে এবং পবিত্র পীঠস্থান (শক্তিপীঠ) হিসেবে পরিচিতি পায়। এ খন্ডগুলিকে একত্রে "একান্ন শক্তিপীঠ" নামে ডাকা হয়। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে মণিকর্ণিকা ঘাটে, সতীর কর্ণ ও কুণ্ডল পতিত হয়েছিল।[]

ঘাট সম্পর্কে আরও একটি কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। শিবের প্রলয় নৃত্যের সময় তার কানের অলংকার এখানে পড়েছিল এবং এভাবেই মণিকর্ণিকা ঘাট তৈরি হয়েছিল।

মণিকর্ণিকা শক্তিপীঠ

[সম্পাদনা]
ত্রিশূলোপরি সতীর মৃতদেহ নিয়ে শিব; অষ্টাদশ শতাব্দী; কাংড়া, হিমাচল প্রদেশ, ভারত; এলএসিএমএ সংগ্রহশালা থেকে।

মণিকর্ণিকা শক্তিপীঠ হিন্দু ধর্মের শক্তিবাদ সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাসনালয়, পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবে পরিগণিত। এটি কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের পশ্চাতে অবস্থিত। শক্তিপীঠটির ব্যুৎপত্তি পৌরাণিক কাহিনীতে বর্ণিত দক্ষ যোগ ও সতীর আত্মদাহের ঘটনাকে মনে করা হয়। মনে করা হয় যে সতী দেবীর কর্ণ কুন্ডল এখানে পড়েছে। সংস্কৃত ভাষায় 'মণিকর্ণ' অর্থ কর্ণ কুন্ডল বা কানের দুল।[]

প্রতিটি শক্তিপীঠের মত মণিকর্নিকা ঘাটের শক্তিপীঠেও শাক্তধর্ম অনুসারীদের সর্বোচ্চ দেবী মহাশক্তির মন্দির রয়েছে। অন্য একটি কাহিনিসূত্র থেকে জানা যায়, এখানে সতীদেবীর তিন অক্ষি বা চোখের একটি পতিত হয়েছিল। দেবীর দিব্যচক্ষু সমগ্র বিশ্বকে দেখতে পায়, তাই দেবীর নাম এখানে বিশালাক্ষী। একারণে, মণিকর্ণিকার শক্তিপীঠটি বিশালাক্ষীর মন্দির নামেও পরিচিত। এই পীঠের শিব কালভৈরব নামে পরিচিত।[]

তাৎপর্য

[সম্পাদনা]

হিন্দু ধর্মমতে, কোন মানুষের এক জীবনের কর্মের ফল অনুযায়ী অন্য জীবনে প্রবেশদ্বার হিসেবে মৃত্যুকে বিবেচনা করা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মণিকর্ণিকা ঘাটের শ্মশানে মৃতদেহ দাহ করা হলে মৃতের আত্মা মোক্ষ অর্জন করে বা পুনর্জন্মের চক্র হতে মুক্তিলাভ করে।[] একারণে এই ঘাটটি প্রবীন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি বিশেষ তীর্থস্থান হিসেবে সুপরিচিত।[] এছাড়াও এখানে একটি কূপ রয়েছে। হিন্দু বিশ্বাস মতে, কূপটি হিন্দুধর্মের অন্যতম দেবতা বিষ্ণু কর্তৃক নির্মিত।[]

প্রস্তাবনা

[সম্পাদনা]

ঘাটটি সংস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন-এর 'ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচার' বিভাগ এবং ভারতের পুনেতে অবস্থিত ভানুভেন নানাবতী আর্কিটেকচার ফর উইমেন(বিএনসিএ)-এর কর্তৃক প্রস্তাবিত হয়েছে।[] এছাড়াও ঘাটটি সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের জন্য ভারতের বারাণসীর পুর্বাঞ্চল অবকাঠামো তহবিলের কাজ চলছে।[১০]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

চিত্রেশিল্পে

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Gupta, Rashmi (৯ মার্চ ২০১১)। "Death Beliefs and Practices from an Asian Indian American Hindu Perspective": 244–266। ডিওআই:10.1080/07481187.2010.518420 
  2. Stories (১০ মার্চ ২০১৫)। "Who Are The Death Photographers Of Varanasi?"। ২৬ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০২০ – YouTube-এর মাধ্যমে। 
  3. "Manikarnika Ghat"। ৩ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১০ 
  4. "In queue even after death, wait for 'moksha' gets longer at Kashi ghats"Hindustan Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৬-১৮। ২০২০-০৬-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১১ 
  5. "The Varanasi Heritage Dossier/Manikarnika Ghat - Wikiversity"en.wikiversity.org। ৮ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০২০ 
  6. "Manikarnika Ghat"Incredible India। ২০২০-০৭-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৮ 
  7. "Kottiyoor Devaswam Temple Administration Portal"kottiyoordevaswom.com। Kottiyoor Devaswam। ৬ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৩ 
  8. গুপ্ত, সুমন (২০০৩)। কাশীর বিশ্বনাথ বিশ্বনাথের কাশীভারত: দৈনিক বর্তমান (সারদ সংখ্যা)। পৃষ্ঠা ৬০। 
  9. "Ghats of Varanasi on the Ganga in India The Cultural Landscape Reclaimed, Department of Landscape Architecture University of Illinois at Urbana Champaign, USA, 2014" (পিডিএফ)। ৫ মে ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০২০ 
  10. PLANNER INDIA (২৯ মে ২০১৭)। "REDEVELOPMENT OF MANIKARNIKA GHAT: PROPOSAL WALKTHROUGH - BY PLANNER INDIA PVT LTD, VARANASI"। ২৬ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০২০ – YouTube-এর মাধ্যমে। 
  11. Ray, Shantanu Guha (১৬ মার্চ ২০১৪)। "In Varanasi, a Lifetime Spent in a World of Death"। ১১ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০২০ 
  12. April 15, INDERJIT BADHWAR; April 15, 1986 ISSUE DATE। "Varanasi's Shamshaan Ghat: The kingdom of Dom Raja, the wealthy owner of the ghat"India Today। ২০২০-০৭-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১১