ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
এই নিবন্ধটির রচনা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। কারণ ব্যাকরণ, রচনাশৈলী, বানান বা বর্ণনাভঙ্গিগত সমস্যা রয়েছে। |
ষড়যন্ত্র তত্ত্ব (ইংরেজি: Conspiracy theory) বা ষড়যন্ত্রবাদ মূলত কোন ঘটনার এমন ব্যাখ্যাকে বোঝায়, যা সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া কোন গভীর ষড়যন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করে থাকে, যার পেছনে সরকার (রাষ্ট্র) বা ক্ষমতাশীল কোন সংগঠনকে দায়ী করা হয়,[১][২][৩] এই যুক্তিতে যে তারা এর মাধ্যমে অসৎ উপায়ে ফায়দা লাভ করতে চায়।[১][৪][৫] এরকম তত্ত্বগুলির একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে এগুলি এমন অবস্থা সৃষ্টি করে যা ইতিহাস এবং ক্ষেত্রবিশেষ সাধারণ বোধের (সরল সত্যতার) সাথে সাংঘর্ষিক। এই পদটি নিন্দাজ্ঞাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়।
বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মাইকেল বার্কুনের মতে, ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো যে দর্শন এর উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে তা হল যে মহাবিশ্ব কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী চলমান। এটি তিনটি মুলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত- ১. কোনকিছু দৈবভাবে ঘটে না। ২. যা আপাত প্রতীয়মান তা সত্য । ৩. সবকিছুই আন্তঃসম্পর্কযুক্ত। বার্কুন এর মতে, ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এ তত্ত্বগুলো সময়ের প্রয়োজনে এদের বিপরীতে আসতে থাকা প্রমাণগুলোর সাথে নিজেদের কিছুটা পরিমার্জন করে খাপ খাইয়ে নেয়। এতে করে এমন একটি বদ্ধ ব্যবস্থার সৃষ্টি হয় যা একে যাচাই এর অযোগ্য করে তুলে। তাই বার্কুন এর মতে, এই ব্যপারটি "প্রমাণ অপেক্ষা বিশ্বাস সাপেক্ষ"।
পদটির ব্যবহার
[সম্পাদনা]মানুষ ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উদ্ভব ঘটায় সামাজিক কিছু সংগঠন এবং তাদের সাথে চিরপরিচিত অশুভ শক্তির ক্ষমতার সম্পর্ক বোঝাতে। এ তত্ত্বগুলোর পেছনে মূলত মনস্তাত্ত্বিক এবং সামজিক-রাজনৈতিক উৎস থাকে। প্রস্তাবিত মানসিক উৎসের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অভিক্ষেপ, অর্থাৎ "একটি নির্দিষ্ট ঘটনাকে নির্দিষ্ট কারণ দ্বারা ব্যাখা করার মানসিক আকাঙ্ক্ষা।" এবং অনূরুপ কিছু মনস্তাত্ত্বিক জটিলতার বহিঃপ্রকাশ, যেমন- ভ্রম বাতুলতা, মৃদু থেকে তীব্র মানসিক জটিলতা। কোন কোন বিশ্লেষক আবার সামাজিক-রাজনৈতিক কারণকে গুরুত্ব দিয়েছেন, এই ভিত্তিতে যে এলোমেলো, অনির্দেশ্য, ব্যাখাতীত ঘটনা থেকে উদ্ভূত ব্যক্তিগত অনিরপত্তাবোধ থেকেও এর উতপত্তি হতে পারে। কোন কোন দার্শনিক আবার মত প্রকাশ করেছেন যে ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাস করার পেছনে যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]অক্সফোর্ড অভিধান অনুযায়ী, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হচ্ছে "কোন ঘটনা ঘটার পেছনে বিদ্যমান জটিল কোন ষড়যন্ত্র, যা নির্দিষ্ট কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের মিলিত চক্রান্তের ফসল, বিশেষতঃ যেথায় ধরে নেয়া হয় যে, কতিপয় গুপ্ত তবে প্রভাবশালী গোষ্ঠী (যাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক এবং শোষণমুলোক) একটি ব্যখাহীন ঘটনার পেছনে দায়ী।" এর সাথে অক্সফোর্ড সর্বপ্রথম এই পদটির ব্যবহারকারী হিসেবে দি এমেরিকান হিস্ট্রিকাল রিভিউএর ১৯০৯ সালের একটি নিবন্ধের উদ্ধৃতি দেয়।
জন আইতোর টুয়েনটিথ সেঞ্চুরি ওয়ার্ডস এর মতে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পদটি শুরুতে নিরপেক্ষ অর্থে ব্যবহৃত হলেও এটি নিন্দাসূচক অর্থে সংজ্ঞায়িত হওয়া শুরু করে ১৯৬০ এর মধ্যের দিকে; এই কারণে যে, এটি প্রচার এর পেছনে এক প্রকার ভ্রম কাজ করে, যা কোন ঘটনার পেছনে প্রভাবশালী, বিদ্বেষ্পরায়ণ তবে গুপ্ত কোন সংস্থাকে কল্পনা করতে বাধ্য করে। ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটি এর অধ্যাপক ল্যান্স ডীহ্যাভেন স্মিথ এর ২০১৩ সালে প্রকাশিত বই কন্সপিরেসি থিওরি ইন এমেরিকা অনুযায়ী কন্সপিরেসি থিওরি পদটি ১৯৬০ সালে প্রথম সি আই এ দ্বারা ব্যবহৃত হয় ,জন এফ কেনেডি এর গুপ্তহত্যার সাথে জড়িত যাবতীয় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কে অসাড় প্রমাণ করতে । তবে স্টকটন ইউনিভার্সিটি এর সহকারী অধ্যাপক রবার্ট ব্লাস্কেউইয এর ভাষ্যানু্যায়ী এমন দাবি নতুন নয়, বরং অন্তত ১৯৯৭ সাল অবধি থেকে চলে এসেছিল এবং ডিহ্যাভেন স্মিথ এর সাম্প্রতিক প্রচার এর কারণে "ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকগণ তার কথাটিকে প্রমাণ হিসেবে ধরে নিয়ে একে উদ্ধৃত করেন ।" ব্লাস্কেউইয পরবর্তিতে এ নিয়ে গবেষণা করে দেখেন যে, এই নামকরনটি কখনই নিরপেক্ষ অর্থে ব্যবহৃত হয় নি বরং এটি দীর্ঘসময় ধরেই কোন ঘটনার প্রেক্ষাপট হিসেবে চরম কোন আন্দাজ বা অবোধ্য অনুমান কল্পনা করাকে বোঝাতে নিন্দনীয় অর্থে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে ১৮৭০ সাল অব্দি থেকে।
স্যান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর রেবেকা মুর জোন্সটাউন ম্যাসাকার এর ঘটনা নিয়ে যে ঘোর অনুমানগুলো চলতে থাকে, যেমন- সি আই এ এর বিরুদ্ধে মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রঙ্কারী পরীক্ষা চালনা করার দাবি ইত্যাদিগুলোকে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে অভিহিত করেন, যা অনেকের মধ্যে ক্ষোভ এর সঞ্চার করে। এর প্রতিউত্তরে তিনি বলেন," তারা আমার প্রতি ক্ষুব্ধ কেননা আমি তাদের জানা সত্যকে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেছি...... তাদের ক্ষোভ করা অনেক অংশে ন্যায্য। কেননা, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পদটি নিরপেক্ষ নয়। এর সাথে নিন্দা, হাস্যরস এবং বর্জনীয় ভাব প্রকাশ পায়। এটি অনেকটা "কাল্ট" শব্দটির মত,যা কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ধর্মীয় সংগঠনকে বোঝায়। মুর এছাড়াও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কে "কলঙ্কিত জ্ঞান" বা "দমনকৃত জ্ঞান" আখ্যা দেন যযে জ্ঞানের ভিত্তি হচ্ছে যে " ক্ষমতাধর কিছু গোষ্ঠী মুক্ত জ্ঞান সরবরাহের পথে বাধা সৃষ্টি করছে এবং একে নিয়ন্ত্রণ করছে কোন বিশেষ অসাধু উদ্দেশ্যে।"
প্রচলিত ধারণা মতে
[সম্পাদনা]কিংস কলেজ লন্ডন এর জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ক্লেয়ার বারশাল এর মতে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হচ্ছে " লৌকিক জ্ঞান ও ব্যাখার একটি রূপ। " সামান্য জ্ঞান অর্জন করে একে বৈধ জ্ঞান এর সাথে এক কাতারে ফেলা হয়। বারশাল এর মতে বৈধ এবং অবৈধ জ্ঞান এর মাঝে পার্থক্য সামান্য। অন্যান্য জনপ্রিয় জ্ঞান বা তথ্যের অন্তর্গত হচ্ছে ভীনগ্রহের প্রাণী দ্বারা অপহরণ,নবযুগীয় দর্শন, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং জ্যোতিঃশাস্ত্র
হ্যারি জি ওয়েস্ট লিখেছেন " ইন্টারনেট এ বিদ্যমান ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের বিচ্ছিন্ন দল হিসেবে অগ্রাহ্য করা হয়। তবে বিদ্যমান প্রমাণাদির সাপেক্ষে দেখা যায়, এমেরিকান দের একটি একটি বড় অংশ বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাস রাখে। ওয়েস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে আমেরিকার চলমান সংস্কৃতি এর অংশ হিসেবে গণ্য করেন এবং একে উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মান্ধতার সাথে তুলনা করেন।
উদাহরণ
[সম্পাদনা]এযাবৎ প্রচুর পরিমাণ ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অস্তিত্ত্ব পাওয়া যায় যাদের জনপ্রিয়তার মাত্রা বিভিন্ন। অধিকাংশ সময় এগুলো রাষ্ট্রীয় গুপ্ত চক্রান্ত, গণহত্যার গুপ্ত প্রকল্প, প্রযুক্তির আড়ালকরণ, জ্ঞান অবদমন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বা ঐতিহাসিক ঘটনার পেছনে লুক্কায়িত ষড়যন্ত্র বোঝালেও এর মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ থাকে না। কিছু কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ওপর আইনি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, যেমন- হলোকস্ট ডিনায়েল। এ তত্ত্বগুলো সাধারণত ঐকমত্যের বিরুদ্ধে যায়,এবং এদের "হিস্ট্রিকাল মেথড" অনুসরণ করে প্রমাণ করা যায় না। এদেরকে প্রমাণিত ষড়যন্ত্রের সাথেও এক কাতারে ফেলা হয় না।
বর্তমানে সামাজিক-যোগাযোগ সাইট গুলোতে এরা বিপুলভাবে ভাবে বিদ্যমান, ব্লগ বা ভিডিও আকারে। ইন্টারনেট কি এ তত্ত্বগুলোকে প্রতিষ্ঠা পাবার আরো ভাল সুযোগ করে দিচ্ছে কিনা তা গবেষণা সাপেক্ষ। তবে সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে এ বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণ মানুষের ঘাটাঘাটি মনিটর করা হয়েছে, যাতে উঠে এসেছে মানুষ এর বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ওপর বিভিন্ন মাত্রায় আকর্ষণ এবং অনলাইন এ এর উপর মানসম্মত, নির্ভরযোগ্য উৎসের অনুপস্থিতি।
ষড়যন্ত্র বনাম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
[সম্পাদনা]কেথরিন কে ইয়াং লিখেছেন, " প্রত্যেকটি প্রকৃত ষড়যন্ত্রের চারটি বৈশিষ্ট্য থাকে- এটি কোন দলবদ্ধ ব্যক্তিদের দ্বারা সংগঠিত হবে, বিচ্ছিন্ন কোন ব্যক্তির দ্বারা নয়। সমাজের সার্বিক উপকারে আসে এমন কোন উদ্দেশ্যবিহীন বরং অশুভ এবং বেআইনি উদ্দেশ্য বিদ্যমান। কৃত ঘটনাগুলো হয় খুব গোছালো ধরনের, বিচ্ছিন্ন এবং স্বতঃস্ফুর্ত নয়। গোপনে চক্রান্ত চলে, প্রকাশ্য আলোচনা নয়।"
যে ষড়যন্ত্রগুলোর সত্যতা পাওয়া গেছে যেমন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং তার সহযোগিদের ওয়াটারগেট স্ক্যান্ডাল ধামাচাপা দেয়ার প্রচেষ্টা ; একে ষড়যত্র তত্ত্ব না বলে বরং "অনুসন্ধানমূল্ক সাংবাদিকতা" বা "ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ" বলা হয়। অপরদিকে, "ওয়াটারগেট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব" প্রকৃতপক্ষে ওয়াটারগেট ষড়যন্ত্রে যুক্ত ব্যক্তিরা যে আসলে নিজেরাই আরেক গভীর ষড়যন্ত্রের স্বীকার তা বোঝানো হয়।
ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের সাথে বৈপরিত্
[সম্পাদনা]ফৌজদারি আইন অনুযায়ী, ষড়যন্ত্র হচ্ছে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির ভবিষ্যতে কোন অপরাধ সম্পন্ন করার জন্য একজোট হওয়া। আমেরিকান পুলিশ একাডেমির মৌলিক পাঠ্যবই অনু্সারে-" যখন কোন অপরাধ ঘটানোর পেছনে অনেক লোকের প্রয়োজন পরে তখন একটি ষড়যন্ত্রের উদ্ভব হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞান এর অধ্যাপক জন জর্জ এর ভাষ্যমতে, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় প্রকৃত ষড়যন্ত্রগুলোর অভিযোগ আনতে হলে সুস্পষ্ট এবং মানসই প্রমাণ পেশ করতে হয়, সংখ্যায় প্রমাণের পরিমাণ কম বা বেশি হোক না কেন, এবং এ ষড়যন্ত্রগুলো একটি সুনির্দিষ্ট ঘটনা বা বিষয়কে কেন্দ্র করেই ঘটবে।
প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা থেকে পৃথকীকরণ
[সম্পাদনা]নোম চম্স্কি প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা থেকে ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে আলদা করেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষণ সাধারণত জনসাধারণের ওপর গুরুত্বারোপ করে, জনবিদিত এবং প্রকাশ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর দীর্ঘমেয়াদী আচরণ বিশ্লেষণ করে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক তত্ত্ব উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিচ্ছিন্ন কিছু ব্যক্তিবর্গের গোপন চক্রান্ত নিয়ে গবেষণা করে।
মনস্তত্ত্ব
[সম্পাদনা]ন্যুনতম ১৯৬০ সাল থেকে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানীদের নিকট খুব আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় , যখন প্রেসিডেন্ট কেনেডি আততায়ীর হাতে নিহত হন। টার্কে সেলিন নেফেস এ তত্ত্বগুলোর পেছনে রাজনৈতিক কারণগুলোকে গুরুত্বে আনেন। তিনি বলেন যে এর দ্বারা সামাজিক সংগঠনগুলোর বাস্তব তবে গুপ্ত ক্ষমতা উন্মোচন করারা প্রচেষ্টা করা হয়।
অশুভ শক্তি ব্যাখার উদ্দেশ্যে
[সম্পাদনা]আমেরিকার চলমান সংস্কৃতি এর অংশ হিসেবে "ষড়যন্ত্র তত্ত্বের" উপরও আলোচনার সময় রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাইকেল বারকুন বলেন, এটি এমন এক বিশ্বাস ব্যবস্থা যা কোন ঘটনার পেছনে শক্তিধর এবং চতুর কোন জনসমষ্টির অমঙ্গলকর উদ্দেশ্য নিহিত সূচনা করে। বার্কুন এর মতে ষড়যন্ত্রের তিনটি পাট বিদ্যমান।
১. প্রথমত, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সেই ব্যাখা দেয় যা প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষণ দিতে অক্ষম হয়। এতে করে বিহ্বল কোন পরিবেশে অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়।
২.দ্বিতীয়ত, ষড়যন্ত্র তাত্ত্বগুলো,অতি সরলভাবে এবং আবেদনময়ীভাবে তত্ত্বগুলো প্রকাশ করে থাকে ,এর সাথে শুভ এবং অশুভ শক্তিকে জড়িয়ে দিয়ে এবং ষড়যন্ত্রকারিদের অশুভ মেরুতে রেখে।
৩. তৃতীয়ত, ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে বিশেষ এবং গোপন তথ্য হিসেবে প্রচার করা হয় যা অনেকের অজানা এবং অনেকের দ্বারা নিগৃহীত। ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের নিকট তারা ব্যতীত বাদবাকিরা মগজ-ধোলাইকৃত পাল এবং একমাত্র তারাই ষড়যন্ত্রকারিদের গুমোর ফাঁস করার কৃতিত্ব বহনকারী।
প্রকারভেদ
[সম্পাদনা]ওয়াকার এর পাঁচ ভাগ
[সম্পাদনা]জেসি ওয়াকার ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোকে পাঁচটি ঐতিহাসিক শ্রেণিতে বিন্যাস করেন।
১. " এনিমি আউটসাইড" - বহিঃশত্রু যারা সমাজের বাহিরে থেকে সমাজের ক্ষতি করতে চক্রান্ত করে চলছে।
২. " এনিমি ইনসাইড " - সমাজের অভ্যন্তরীন জোট যাদের সমাজের অন্যান্যদের থেকে পৃথক করা যায় না।
৩. " এনিমি এবাভ " - সমাজের উচ্চশ্রেণিদের জোট যারা নিজ স্বার্থ উদ্ধার করতে সমাজকে ব্যবহার করে চলছে।
৪. " এনিমি বিলো "- সমাজের নিচুশ্রেণিদের জোট যারা সব বাধা ভেঙ্গে সমাজ ব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলতে চায়।
৫." বেনেভোলেন্ট কন্সপিরেসিস ''- দেবদূততূল্য জনসমষ্টি যারা পর্দার পেছনে কাজ করে পৃথিবীকে আরো বসবাসযোগ্য এবং পরোপকার করে চলছে।
বার্কুন এর তিন ভাগ
[সম্পাদনা]বার্কুন পরিসরের ওপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করেছেন,
১. ঘটনাকেন্দ্রিক ষড়যন্ত্রঃ বার্কুন লিখেছেন-" এ ষড়যন্ত্র গুলো নির্দিষ্ট কোন ঘটনা বা অল্প কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে সীমাবধ্য। ষড়যন্ত্রকারীদের এক্ষেত্রে ধরা হয় যে তারা নির্দিষ্ট কোন উদ্দেশ্যে একটি সীমাবধ্য পরিসরে তাদের সকল শ্রম নিবদ্ধ করে। যেমন - কেনেডী গুপ্তহত্যা , ৯/১১ আক্রমণ , কৃষ্ণকায়দের মাঝে এইডস এর মহামারী ছড়ানো, টি ডব্লিউ এ ফ্লাইট এর ক্র্যাস ইত্যাদি।
২.সাংগঠনিক ষড়যন্ত্রঃ বার্কুন এর মতে এরুপ ষড়যন্ত্রের পেছনে বৃহৎ কোন উদ্দেশ্য থাকে, বিশেষ করে কোন রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করা, এমনকি পুরো পৃথিবীরও হতে পারে। লক্ষ্য ক্ষেত্রবিশেষে পাল্টাতে দেখা গেলেও ষড়যন্ত্রের কৌশল প্রায় ক্ষেত্রে একই থাকে- একটি একক, সাধারণ , অশুভ সংস্থা যারা বিরাজমান প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুপ্রবেশ করে এদের বিধ্বংস করার পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর এটি একটি সাধারণ দৃশ্য যা ইহুদী, ফ্রিম্যাসন্স, ক্যাথলিক চার্চ এর বিরুদ্ধে প্রায়শঃই এরুপ কূটকৌশল এর অভিযোগ আনে। এমনকি সাম্যবাদী বা আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদিদের বিরুদ্ধেও এমন অভিজোগ পাওয়া যায়।
৩ তীব্র ষড়যন্ত্রঃ বার্কুন বলেন-" এ ষড়যন্ত্রের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি ভিন্ন ভিন্ন অনেকগুলো ষড়যন্ত্রের ক্রমসমন্বয়ে তৈরী। ঘটনাকেন্দ্রিক এবং সাংগঠনিক ষড়যন্ত্রের জটিল এক সম্পর্কের জাল, যার চূড়ায় এক পরম শক্তিধর সত্তা বিদ্যমান যারা অন্যান্য ক্ষুদে চক্রান্তকারীদের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহার করে চলছে। এ ধারার ষড়যন্ত্রগুলো ১৯৮০ সালের দিকে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে ডেভিড আইক এবং মিল্টন উইলিয়াম কপার এর লেখার মাধ্যমে।
রথবোর্ড এর অগভীর বনাম গভীর
[সম্পাদনা]উদারবাদী অর্থনীতিবিদ মুরে রথবোর্ড অগভীর ষড়যন্ত্রের বিপক্ষে এবং গভীর ষড়যন্ত্রের পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন। তার মতে একজন অগভীর ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিক একটি ঝাপসা ব্যপার পর্যবেক্ষণ করে নিজেকে প্রশ্ন করে, " এতে কে লাভবান হচ্ছে?" এরপর সে একজন সম্ভাব্য সুফল্ভোক্তাকে চক্রান্তকারী হিসেবে ধরে নেয় এবং তার বিরুদ্ধে গুপ্তভাবে ঘটনা নিয়ন্ত্রণের ধারণা পোষণ করে। অপরপক্ষে, গভীর ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা একটি সন্দেহউদ্রেককারী অবস্থান থেকে যাত্রা শুরু করেন এবং যথযোগ্য ও মানসম্মত প্রমাণ জড়ো করা শুরু করেন। তিনি বলেন যে এরুপে তাত্ত্বিক " মনে উদয় হওয়া প্রাথমিক সন্দেহ কে আরোদূর যৌক্তিক বিশ্লেষণ যাচাই করে নেন।" কন্সপিরেসিসম
বৈশ্বিক দর্শন হিসেবে "কন্সপিরেসিসম"
[সম্পাদনা]"কন্সপিরেসিসম" বলতে বোঝায় বিশেষ একটি বৈশ্বিক দর্শনকে যা বিশ্বের ইতিহাস এর কেন্দ্রে ষড়যন্ত্রকে রেখে একে উন্মোচন করার চেষ্টা করে। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং কন্সপিরেসিসম নিয়ে যত প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা হয়েছে তাতে নানা ধরনের প্রকল্প ফুটে উঠেছে। বার্লেট এবন লায়ন্স এর মতে, " কন্সপিরেসিসম হল এমন এক আখ্যান যা অশুভ অর্থে ধারণকৃত কোন শত্রু সংগঠনকে জনগনের সার্বিক মঙ্গলের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী হিসেবে বলির পাঠা বানায় এবং শিসদাতাকে বীরের ভূষণে ভূষিত করে।
ইতিহাসবিদ রিচার্ড হফসটাটার আমেরিকান ইতিহাসে ভ্রমগ্রস্ততা এবং কন্সপিরেসিসমকে তার রচনা আমেরিকান রাজনীতিতে ভ্রমগ্রস্ততার রুপ বইটিতে উল্লেখ করেন, যা ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয়। বার্নার্ড বেইলিন এর আমেরিকান বিপ্লবের আদর্শগত ব্যুৎপত্তি (১৯৬৪) বইটিতে তিনি উল্লেখ করেন যে একই ধরনের ঘটনা আমেরিকান বিপ্লবের আগেও লক্ষণীয়। কন্সপিরেসিসম মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এবং কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উপর আলোকপাত করে যা বৈশ্বিক এবং একই সাথে ইতিহাসকেন্দ্রিক।
কন্সপিরেসিসম পদটি আরো জনপ্রিয়তা লাভ করে ফ্র্যাঙ্ক পি মিন্টয এর মাধ্যমে ১৯৮০ সালের দিকে। মিন্টয এর মতে , কন্সপিরেসিসম হচ্ছে " এমন বিশ্বাস যা ইতিহাস উদঘাটনে ষড়যন্ত্রের মুখ্য উপস্থিতিকে ধরে নেয়। "
কন্সপিরেসিসম আমেরিকা এবং অন্যান্য অঞ্চলের বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনের চাহিদার যোগান দেয়। এটি অভিজাতদের আর্থ-সামাজিক ধবসের পেছনে দায়ী করে,এবং সাথে সাথে এও ধারণা করে যে, গণপদক্ষেপ এর মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা গেলে তবেই সুসময় আসবে। এমন করে কন্সপিরেসিসম কোন বিশেষ আদর্শের ওপর দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করে না।
মানব ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক উচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা নানা গণহত্যা এবং দুর্বিপাকের পেছনে দায়ী। এমনকি তারা নিজেরা কিছু ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িয়ে একই সাথে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রচার করে গিয়েছেন নিজেদের লক্ষ বাস্তবায়নের জন্য। হিটলার এবন স্ট্যালিন দাবি করত যে তারা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে তারা রাষ্ট্রের অমঙ্গল সাধনে চক্রান্ত করে চলছে। এমনকি অনেক প্রকৃত ষড়যন্ত্রকে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল, যা পরবর্তিতে সত্য প্রমাণিত হয়। তবে ইতিহাস যে কোন এক দির্ঘমেয়াদী চক্রান্ত দ্বারা চালিত তা ইতিহাসবিদ ব্রুস কামিংস এর দ্বারা প্রত্যাখ্যাত।
তবুও যদি সত্যিকার অর্থে যদি ষড়যন্ত্রের অস্তিত্ব থাকে, তা ইতিহাসকে সামান্যই নাড়া দেয়। এগুলো প্রান্তীয় কিছু পরিবর্তন আনলেও তা মূলত চক্রান্তকারীদের চক্রান্তের উপজাত হিসেবে আসে যা এর রচয়িতারাও অনুমান করতে পারে না। ইতিহাস মূলত বৃহৎ শক্তি এবং সংগঠিত মানব অবকাঠামোর দ্বারা চালিত হয়।
তাইম ম্যাগাজিন এর জাস্টিন ফক্স কন্সপিরেসিসম এর বাস্তবধর্মী ব্যাখা দেন। তিনি বলেন যে ওয়াল স্ট্রিট এর ব্যবসায়ী এবং দালালগোষ্ঠীরা অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্বপ্রবণ, এবং এর সাথে কিছু অর্থনৈতিক বাজার ষড়যন্ত্রের তথ্য আরোপ করেন যার দ্বারা বাজারব্যাবস্থার প্রতিনিয়ত উত্থান পতন ব্যাখা করা যায়। অনেক সৎ সাংবাদিকরা তার মতে ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিক, এবং তাদের আংশিক কিছু অংশ মাঝে মাঝে সত্যও বনে যায়।
যুক্তরাষ্ট্র
[সম্পাদনা]" কিছু ইতিহাসবিদ ধারণা প্রস্তাব করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর জন্য প্রজনন স্থল হিসেবে কাজ করছে। এর পেছনে কারণ হল ১৯৬০ সাল থেকে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু গুরুত্ববাহী উচ্চপর্যায়ের ষড়যন্ত্র।" এমন প্রকৃত কিছু ষড়যন্ত্র অন্যান্য ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের পেছনে জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।
মধ্যপ্রাচ্য
[সম্পাদনা]ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো আরব সংস্কৃতি এবং রাজনীতি বোঝার জন্য একটি গুরুত্ববাহী উপাদান। প্রফেসর ম্যাথিউ গ্রে এর মতে এগুলো " খুবই সাধারণ এবং জনপ্রিয় ঘটনা "। " কনপিরেসিসম আরব ভূখন্ডের রাজনীতি বুঝার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। এর বিভিন্ন রুপভেদের মধ্যে আছে উপনিবেশবাদ,ইহুদিবাদ, পরাশক্তি, তেল রাজনীতি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যা অধিকাংশে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মনে করে। উদাহরনস্বরূপ, দা প্রটোকলস অফ দা এল্ডারলি যায়ন নামক কুখ্যাত ভুয়া দলিল যা পৃথিবীর ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে ইহুদিদের নীলনকশার কথা প্রকাশ করে তা মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে পঠিত এবং প্রচারিত। রজার কোহেনের মতে, আরব সাম্রাজ্যে ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো হলো, "ক্ষমতাহীনদের চূড়ান্ত আশ্রয় এর মত"। আল মুমিন এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেন যে, " এ তত্ত্বগুলো শুধু আমাদের সত্য জানা থেকেই বিরত রাখে না, বরং নিজদের দোষত্রুটি স্বীকার এবং মোকাবেলা করা থেকেও বিরত রাখে। "
প্রাদুর্ভাব
[সম্পাদনা]কিছু বিজ্ঞের মতে,একদা ক্ষুদ্র পরিসরে পাঠকসীমার মধ্যে বিদ্যমান থাকলেও বর্তমানে গণমাধ্যমে সাধারণ যায়গা করে নিয়েছে, এবং কন্সপিরেসিসমকে বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দির যুক্তরাষ্ট্রের উদীয়মান সাংস্কৃতিক প্রপঞ্চ হিসেবে পরিণত করতে অবদান রেখেছে। নৃতত্ত্ববিদ হ্যারি জি ওয়েস্টার এবং টড স্যান্ডার্স এ মতে, আমেরিকানদের একটি বড় অংশ অন্তত কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্বে দৃঢ় বিশ্বাস করে। ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাস তাই বর্তমানে সমাজবিজ্ঞানী, মনস্তাত্ত্বিক, এবং লোকসংস্কৃতির বিশেষজ্ঞদের কাছে আকর্ষণের বিষয় হয়ে উঠেছে।
মনস্তাত্ত্বিক মূল
[সম্পাদনা]কিছু মনবিজ্ঞানীদের মতে, যারা ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাস করে তাদের অন্যের কথা সহজে বিশ্বাস করার প্রবণতা থাকে।
কোন মনবিজ্ঞানী মনে করেন যে, উদ্দেশ্য অনুসন্ধান হচ্ছে কন্সপিরেসিসম এর একটি সাধারণ বিষয় এবং এর বিকাশে সহায়ক। এমনকি এ বিষয়টি এমনই ক্ষমতাবাহী যে, এটি একাই এই ধারণা প্রণয়নে ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রথমে কোন ব্যাপারে অনুমান করা হয়, পরে আগত তথ্য-উপাত্ত সুবিধানুযায়ী বিশ্লেষণ করে এবং সাংঘর্ষিক তথ্য উপেক্ষা করে-অনুমিত প্রকল্পকে আরো দৃঢ় করা হয়। এভাবে কন্সপিরেসিসম এ বিশ্বাস আরো মজবুত হয়। কোন সামাজিক গোষ্ঠীতে যখন কোন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব জনপ্রিয়তা পায়, তখন তা সামজিক চাপেও অনেকক্ষেত্রে স্থায়ীত্ব লাভ করে। ইউনিভার্সিটি অফ কেন্ট এ সম্পাদিত কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে যে, লোকে ষড়যন্ত্র তত্ত্বে প্রভাবিত হতে পারে, নিজের ঘটমান আচরণগত পরিবর্তন সম্পর্কে অবগত না থেকেও। এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ওয়েলস এর রাজকুমারী প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু নিয়ে প্রচলিত জনপ্রিয় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পড়তে দেয়া হয়। পড়ার পর তারা একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সহজে অনুধাবন করতে পারে, তবে নিজেরটি নয়। এটি মূলত তাদের নিজ নিজ বিশ্বাস করা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রতি দুর্বলতা এবং পক্ষপাতিত্ব এর কারণে। তাই , উদ্ভবকগণ ইতি টানেন এই বলে যে,ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো গুপ্ত এক বিশেষ মোহে সকলকে আকৃষ্ট করে।
২০১২ সালে প্রকাশিত এক সংখ্যায় উঠে এসেছে যে, ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসী লোকেরা বহুবিধ ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করার প্রবণতা রাখে, এমনকি তারা একে অপরের সাথে সাংঘর্ষিক হলেও। যেমন, অনেক লোক যারা বিশ্বাস করে যে ওসামা বিন লাদেন আমেরিকানদের দ্বারা জীবিত উদ্ধার হয়েছে তারা সম্ভাব্যভাবে এও বিশ্বাস করে যে, ওসামা বিন লাদেনকে ২০১১ সালের পূর্বে তার বাসস্থান পাকিস্তান এর এবটোবাদে অভীযান চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
সায়েন্টিফিক জার্নালে ২০১৩ সালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে স্যান্ডার ভ্যান ডার লিন্ডেন আলোচনা করেন যে, প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এই উপসংহারে আসা যায়, ১) যারা ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাস করে তারা অন্যান্য তত্ত্বগুলোকেও সহজেই১ সমর্থন করে। ২) ষড়যন্ত্রের ধারণাগুলো তৈরীর পেছনে সাধারণত সিযোটপি এবং ভ্রমগ্রস্ততা জড়িত। ৩) ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি সুপ্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ওপর অবিশ্বাস সৃষ্টি করে, যেমন- ক্যান্সার এর সাথে ধূমপান এর সম্পর্ক, বৈশ্বিক উষ্ণতার সাথে কার্বন-ডাই -অক্সাইড এর নির্গমনের সম্পর্ক। ৪) ষড়যন্ত্রের কল্পনাগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষকে এমন প্যাটার্ন দেখতে সাহায্য করে যার আসলে কোন অস্তিত্বই থাকে না। ভ্যান ডার লিন্ডেন "ষড়যন্ত্র-প্রভাব" পদটির প্রচলন করেন।
মানবতাবাদি মনোবৈজ্ঞানিকগণ এর মতে, ষড়যন্ত্রগুলোর পেছনে চক্রান্তকারী গোষ্ঠীদেরকে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিকূল দৃষ্টিতে দেখলেও এই বিশ্বাস এর পেছনে কিছুটা আশ্বাস কাজ করে। এর কারণ হতে পারে যে, মানব সমাজের উত্থান-পতন এবং জটিলতার পেছনে মানুষ এর হাত আছে মনে করা , মানব নিয়ন্ত্রণ এর বাহিরে কোন কিছুকে দায় করা অপেক্ষা বেশি সান্ত্বনাদায়ক। এমন বিশ্বাস মানুষকে ভাবায় যে, কোন ঘটনাই দৈবাৎ নয় বরং মানবনিয়ন্ত্রিত। এতে করে এই ধারণার উৎপত্তি হয় যে চক্রান্তগুলো মানুষের ধরা-ছোঁয়ার মধ্যে এবং নিরাময়যোগ্য। যদি এমন কোন চক্রান্তকারীদের উদ্ভব হয়েও থাকে তাও এদের চক্রান্ত ধূলিসাৎ করে দেয়াও সম্ভব, অথবা বিপরীতভাবে এতে অংশ নেয়াও সম্ভব। পরিশেষে, এরুপ তত্ত্বে বিশ্বাস লোক-মর্যাদার এক অন্তর্নিহিত রুপ, যা অবচেতন মনে তবে প্রয়োজন এর স্বার্থে মানুষকে তার অসহায়বোধ থেকে মুক্তিদান করে এবং তাকে ঘটিত সব ঘটনার পেছনে দায়ী থাকে।
অভিক্ষেপ
[সম্পাদনা]কোন কোন ইতিহাসবিদ এর মতে, ষড়যন্ত্র ভাবাপন্ন মনোভাব এর সাথে মানসিক অভিক্ষেপ কিছুটা সংশ্লিষ্ট। তাদের প্রদত্ত যুক্তি অনুযায়ী,এই অভিক্ষেপ উদ্ভাসিত হয় নিজের ভেতর সুপ্ত অসৎ গুনাবলিগুলোকে ষড়যন্ত্রকারীদের চরিত্রে আরোপণ করে। রিচার্ড হফস্টাটার বলেন,
"এটি স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, এ গুপ্ত শত্রুটি আসলে ব্যক্তিচরিত্রেরই একাংশের প্রতিরূপ। ব্যক্তিচরিত্রের সকল মন্দ ও অগ্রহনযোগ্য দিকগুলো দিয়ে তাকে চরিত্রায়িত করা হয়। প্রতিপক্ষ সর্বজনীন বুদ্ধিজীবী হতে পারে বটে , তবে ভ্রমগ্রস্তরা তাকে বিদ্যাবেত্তায় ছাড়িয়ে যাবার ভ্রমে নিমজ্জ থাকে। কু ক্লুক্স ক্ল্যান যেমন ক্যথলিসিসম এর অনুকরণে তাদের পুরোহিতদের মত বেশভূষা গ্রহণ করেছিল, এছাড়া ক্যাথলিকদের ন্যায় অঙ্গশাখার সম্প্রসারণ এবং আচার-প্রথার বিকাশ ঘটিয়েছিল। জন বার্ক সোসাইটি কমিউনিস্ট সেল এর অনুকরণে এবং সম্মুখভাগের অংশ দ্বারা আপাতদৃষ্টিতে গোপন ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে নিজেদের সাথে আদর্শগত দ্বন্দ্বে লিপ্ত সাম্যবাদী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর উদ্যোগের আহবান জানায়। বিভিন্ন গোঁড়া সমাজতন্ত্রবিরোধী সংগঠনের মুখপাত্ররা জনসমক্ষে সাম্যবাদবিরোধী আন্দোলন এর বিরুদ্ধে নিষ্ঠার সাথে কাজ করাকে প্রশংসিত করেছেন। "
হফস্টাটার আরো উল্লেখ করেন যে, কলঙ্ক হিসেবে " যৌন স্বাধীনতা " দ্বারা প্রতিপক্ষকে প্রায়ই কলঙ্কায়িত করা হয়। তিনি এও বলেন যে," অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরুপ বিশ্বাসীরা স্পষ্টভাবে মর্ষকামি গোছের হয়। যেমন মেসন-বিরোধীরা মেসনিক শাস্তির কথা ভেবে পুলক বোধ করে।
২০১১ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে যে, মাকিয়াভেলিয়ান লোকেরা ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোতে অপেক্ষাকৃত বেশি বিশ্বাসপ্রবণ হয়। কারণ তারা অভিযুক্ত ষড়যন্ত্রকারীদের মত একই অবস্থায় থাকলে হয়ত নিজেরাই ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়ে বসত।
এপিস্টেমিক বাইয়াস
[সম্পাদনা]ব্রিটিশ মনোবৈজ্ঞানিক সংস্থা অনুসারে এমনটি সম্ভব যে, কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে মানুষ জ্ঞানের ব্যাপারে পক্ষপাতদুষ্ট ভাব প্রকাশ করছে। তাদেরই চালিত এক জরিপে দেখা গেছে যে, মানুষেরা থাম্ব রুল ব্যবহার করে যা তাদের মনে এই ধারণা তৈরী করে যে, কোন নির্দিষ্ট ঘটনার পেছনে কোন নির্দিষ্ট কারণ থাকতে হবে। তারা জরিপে অংশগ্রহনকারীদের একই প্রেক্ষাপটে চার রকম ঘটনার বিবরণ করেন। একজন বিদেশী রাষ্ট্রপতি আততায়ীর হাতে ১)নিহত হয়েছেন, ২)আহত হয়েছেন, ৩) আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সেরেও উঠেছেন তবে পরবর্তিতে কোন এক সময় হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করেন, ৪) আঘাতপ্রাপ্ত হন নি। অংশগ্রহনকারীরা গুরু ঘটনাগুলোতে সন্দেহ জমাতে শুরু করে, অর্থাৎ যেগুলোতে রাষ্ট্রপতি মারা যায়। যদিও চারটি ঘটনার পেছনেই সমপরিমান প্রমাণ বিদ্যমান। এপোফেনিয়া, মানুষের একটি স্বাভাবিক জেনেটিক বৈশিষ্ট্য যা তাকে বিভিন্ন দৈবাৎ ঘটনার পেছনে প্যাটার্ন সন্ধানের প্রবণতা তৈরী করে, তাই মূলত বিভিন্ন ঘটনার আড়ালে ব্যক্তিকে ষড়যন্ত্রের আভাস দেয়।
আরেক এপিস্টেমিক " রুল অফ থাম্ব " এই অর্থে প্রয়োগ করা যেতে পারে যে, কোন নির্দিষ্ট ঘটনা কাদের লাভবান করছে?-এই প্রশ্নের উত্তর করে। গুপ্ত অভিসন্ধি এর পেছনে এই সংবেদনশীলতাকে মানুষের দীর্ঘদিনের বিবর্তন এর ফসল হিসেবে ধরা হয়।
ক্লিনিকাল সাইকোলজি
[সম্পাদনা]কিছু কিছু ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে, ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর প্রতি অতিরিক্ত বিশ্বাস, পুনর্পুনঃ প্রমাণের প্রচেস্টা, বা বারবার পুনরাবৃত্তি করা, মানসিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
সামাজিক-রাজনৈতিক মূল
[সম্পাদনা]ক্রিস্টোফার হিচেন্স এর মতে, ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো হচ্ছে গণতন্ত্রের নিষ্কাশিত ধোঁয়া, বৃহৎ জনসমষ্টির মাঝে ব্যাপক পরিমাণ তথ্য পরিচলনের ফসল। ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো মানসিকভাবে তৃপ্তিদায়ক হতে পারে, যখন নৈতিকতার প্রসঙ্গে তা বোধগম্য হয়। এভাবে, এরুপ মতবাদে বিশ্বাসী লোকেরা অপর কোন এক গোষ্ঠীর ওপর নৈতিক দায় চাপিয়ে দিতে পারে ( এমন গোষ্ঠী যার সে অন্তর্ভুক্ত নয় )। এতে করে সে প্রাতিষ্ঠানিক বা সামজিক যে কারণে অনৈক্যের সৃষ্টি তা থেকে নিষ্কৃতি অনুভব করতে পারে। রজার কোহেন নিউ ইয়র্ক টাইমস এ লেখেন, " বন্দি মনগুলো ষড়যন্ত্র তত্ত্বে অধিক বিশ্বাসপ্রবণ হয় কেননা এটি ক্ষমতাহীনের শেষ আশ্রয়। তারা নিজেদের জীবনে সুপরিবর্তন আনতে অপারগ হলে এই ভেবে শান্তি পায় যে, পৃথিবী কিছু পরাক্রমশালী নিয়ন্ত্রক দ্বারা চালিত হচ্ছে বিধায় আজ তার এই অবস্থা।
যেক্ষেত্রে সামজিক অবস্থার কারণে বা ক্ষমতা বহির্ভুত হবার কারণে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয় না, সেখানে , ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো মানসিক চাহিদাগুলোকে পূর্ণতা দেয়। একারণে এরুপ মতবাদগুলো
সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন বা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন পরিবেশে বেশি প্রভাব বিস্তার করে।
সমাজবিজ্ঞানী হোলগার হেরউইগ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ব্যুৎপত্তির ইতিহাসের জার্মান সংস্করন গবেষণা করতে গিয়ে দেখেন যে, যেসব ঘটনাগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো অতিরিক্ত দূর্বোধ্য, কারণ এ ঘটনাগুলো সবজান্তাদের এবং শ্রুতিলেখকদের বেশি আকৃষ্ট করে থাকে।
অপরদিকে, ষড়যন্ত্র মতবাদ্গুলো ঘটনাপরিক্রম এবং সংশ্লিষ্ট প্রমাণাদির অসামঞ্জস্য থেকেও উৎপত্তি লাভ করতে পারে। এভাবে তারা ঘটনাটির কিছু অনাবিষ্কৃত ক্ষেত্রের ব্যাপারে ইঙ্গিত করতে সক্ষম হয়।
সমালোচনা তত্ত্বের প্রভাব
[সম্পাদনা]ফ্রেঞ্চ সমাজবিজ্ঞানী ব্রুনো লাটুর এর মতে, ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর বিস্তর জনপ্রিয়তার মূলে মার্ক্সিস্ট অনুপ্রাণীত ক্রিটিকাল থিওরি এবং ১৯৭০ থেকে একাডেমিয়াতে চলে আসা সমধর্মী কিছু ধারণার পরিব্যাপকতা কাজ করে।
লাটুর মন্তব্য করেন যে , একাডেমিয়াতে ৯০ শতাংশ সমসাময়িক সামাজিক সমালোচনাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যাকে তিনি আখ্যায়িত করেন " ফেইরি পজিশন এবং ফ্যাক্ট পজিশন " নামে। ফ্যাক্ট পজিশনটি অতিপ্রাকৃত শক্তিবিরোধী. এই মত অনুযায়ী ' বিশ্বাসের বস্তু ' (ধর্ম,শিল্প) কিছু ধারণামাত্র যার ওপর ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। লাটুর বলেন যে, এই পদ্ধতি অনুসরনকারীরা নিজেদের মতামতের ব্যাপারে পক্ষপাতদুষ্ট হয়, এই ভেবে যে তাদের ধারণা " বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত "। এই ব্যাপারে তাদের নিকট ঘটনা সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য এবং রহস্য উদঘাটনের সঠিক পদ্ধতি অনুসরন আবশ্যকীয়। ফেইরী পজিশন অনুযায়ী, প্রত্যেকে স্বতন্ত্রভাবে এক প্রকার বহিঃশক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের অজ্ঞাতেই। লাটুর বলেন, এ দুই পদ্ধতি একাডেমিয়াতে দুই মেরুর সৃষ্টি করেছে যার উভয় দিকই খুব তীব্র। " আপনারা কি দেখেছেন , সুক্ষ্মদর্শী চিন্তাধারা থাকার মজাটা কোথায়? " -লাটুর প্রশ্ন করেন এবং প্রতিউত্তরে বলেন, " আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি সর্বদাই সঠিক "।
গণমাধ্যমের অলংকরন
[সম্পাদনা]গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে এক প্রবণতা কাজ করে, তারা কোন ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা বুঝতে গিয়ে তারা ব্যক্তিবিশেষের দৃষ্টিকোণ বিবেচনা করে উপসংহারে আসে, কোন সাংগঠনিক বা প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষণ এর মধ্য দিয়ে না গিয়ে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, উক্ত গণমাধ্যম এর ভোক্তাদের নাটকীয়, আকর্ষণীয় খবর গুলো বেশি গ্রহণীয় হয়ে থাকে এবং অধিকাংশ সংবাদকর্মীরাও সংবাদ তৈরীর সময় এ ব্যপারগুলো মাথায় রেখে সংবাদ এ নামে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Harambam, Jaron; Aupers, Stef (আগস্ট ২০২১)। "From the unbelievable to the undeniable: Epistemological pluralism, or how conspiracy theorists legitimate their extraordinary truth claims"। European Journal of Cultural Studies। SAGE Publications। 24 (4): 990–1008। আইএসএসএন 1460-3551। ডিওআই:10.1177/1367549419886045 ।
- ↑ Goertzel, Ted (ডিসেম্বর ১৯৯৪)। "Belief in conspiracy theories"। Political Psychology। Wiley on behalf of the International Society of Political Psychology। 15 (4): 731–742। আইএসএসএন 1467-9221। জেস্টোর 3791630। ডিওআই:10.2307/3791630।
"explanations for important events that involve secret plots by powerful and malevolent groups"
- ↑ "conspiracy theory"। অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি (অনলাইন সংস্করণ)। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। (Sসাবস্ক্রিপশন বা পার্টিশিপেটিং ইনস্টিটিউট মেম্বারশিপ প্রয়োজনীয়.) "the theory that an event or phenomenon occurs as a result of a conspiracy between interested parties; spec. a belief that some covert but influential agency (typically political in motivation and oppressive in intent) is responsible for an unexplained event"
- ↑ Brotherton, Robert; French, Christopher C.; Pickering, Alan D. (২০১৩)। "Measuring Belief in Conspiracy Theories: The Generic Conspiracist Beliefs Scale"। Frontiers in Psychology। 4: 279। আইএসএসএন 1664-1078। এসটুসিআইডি 16685781। ডিওআই:10.3389/fpsyg.2013.00279 । পিএমআইডি 23734136। পিএমসি 3659314 ।
A conspiracist belief can be described as 'the unnecessary assumption of conspiracy when other explanations are more probable'.
- ↑ Additional sources:
- Aaronovitch, David (২০০৯)। Voodoo Histories: The Role of the Conspiracy Theory in Shaping Modern History (ইংরেজি ভাষায়)। Jonathan Cape। পৃষ্ঠা 253। আইএসবিএন 9780224074704। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৯।
It is a contention of this book that conspiracy theorists fail to apply the principle of Occam's razor to their arguments.
- Brotherton, Robert; French, Christopher C. (২০১৪)। "Belief in Conspiracy Theories and Susceptibility to the Conjunction Fallacy"। Applied Cognitive Psychology। 28 (2): 238–248। আইএসএসএন 0888-4080। ডিওআই:10.1002/acp.2995 ।
A conspiracy theory can be defined as an unverified and relatively implausible allegation of conspiracy, claiming that significant events are the result of a secret plot carried out by a preternaturally sinister and powerful group of people.
- Jonason, Peter Karl; March, Evita; Springer, Jordan (২০১৯)। "Belief in conspiracy theories: The predictive role of schizotypy, Machiavellianism, and primary psychopathy"। PLOS ONE। 14 (12): e0225964। আইএসএসএন 1932-6203। ডিওআই:10.1371/journal.pone.0225964 । পিএমআইডি 31794581। পিএমসি 6890261 । বিবকোড:2019PLoSO..1425964M।
Conspiracy theories are a subset of false beliefs, and generally implicate a malevolent force (e.g., a government body or secret society) involved in orchestrating major events or providing misinformation regarding the details of events to an unwitting public, in part of a plot towards achieving a sinister goal.
- Thresher-Andrews, Christopher (২০১৩)। "An introduction into the world of conspiracy" (পিডিএফ)। PsyPAG Quarterly। 1 (88): 5–8। এসটুসিআইডি 255932379 Check
|s2cid=
value (সাহায্য)। ডিওআই:10.53841/bpspag.2013.1.88.5।Conspiracy theories are unsubstantiated, less plausible alternatives to the mainstream explanation of the event; they assume everything is intended, with malignity. Crucially, they are also epistemically self-insulating in their construction and arguments
- Aaronovitch, David (২০০৯)। Voodoo Histories: The Role of the Conspiracy Theory in Shaping Modern History (ইংরেজি ভাষায়)। Jonathan Cape। পৃষ্ঠা 253। আইএসবিএন 9780224074704। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৯।