কদমা
উৎপত্তিস্থল | ভারত ও বাংলাদেশ |
---|---|
পরিবেশন | স্বাভাবিক তাপমাত্রা |
প্রধান উপকরণ | চিনি |
কদমা বাংলার একটি শুকনো মিষ্টি বিশেষ।[১] বাংলায় অনেক পুরনো মিষ্টির মধ্যে কদমা, বাতাসা, নকুলদানাঅন্যতম। বাংলায় অতিথি আপ্যায়নে কদমা অনেক পুরনো রীতি। যদিও এখন আর এই মিষ্টির আগের কৌলীন্যতা নেই। তবে পূজার কাজে এখনও বহুল ব্যবহার আছে। বিশেষত কালী পূজায় কদমার ব্যবহার বেশি। সিলেট অঞ্চলে একে তিলুয়া বলা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহায়তায় এই মিষ্টির কৌলীন্যটা ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে।[২]
পরিচয়
[সম্পাদনা]দেখতে অনেকটা কদমফুল আকারের এবং ভিতরটা ফাঁপা।[৩] উপর ও নিচ খানিক কমলালেবুর মতো চাপা। ধবধবে সাদার প্রধানত তৈরি করা হয়। প্রয়োজন ভেদে এর আকারও বিভিন্ন। একদম ছোট ১সেমি ব্যাসের থেকে শুরু করে ১০-১৫সেমি পর্যন্ত বানানো হয়।
প্রস্তুত প্রণালী
[সম্পাদনা]মূলত চিনি দিয়ে তৈরি হয়। প্রথমে জলে চিনি দিয়ে ফোটাতে হবে। এরপর ঠাণ্ডা করে চিনি জমাট বাঁধলে ছড়ানো পাত্রে অল্আপ আইসিং সুগার ছিটিয়ে শিরা ঢেলে অল্প গরম থাকা অবস্থায় রোল করে খুঁটিতে ঝুলিয়ে টানতে হবে। এরপর আবার ভাঁজ করে পুনরায় টানতে হবে। এভাবে অনেকবার করলে যখন ভেতরটা ফাঁপানো হয়ে যায় তখন চপিংবোর্ডে আইসিং সুগার ছিটিয়ে রোল করে কদমা বানানোর ছাঁচ বা মেকারে চাপ দিয়ে কেটে কদমার আকারে কেটে নিতে হয়। এরপর বাতাসে রেখে শুকিয়ে নিতে হয়।[৪]
ব্যবহার
[সম্পাদনা]সাধারণত পৌষ সংক্রান্তিতে কদমা বেশি খাওয়া হয়। কালী পূজা, মেলা, রথ প্রভৃতিতে কদমা আবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। কালী ঠাকুরের হাতে কদমা দেওয়ার অতি পুরনো একটি রীতি। ঠাকুরের হাতে বিশালাকার কদমা দেওয়ার প্রতিযোগীয়তাও হয়। লক্ষ্মীপুজতেও এর ব্যবহার আছে।[৫]
সমস্যা
[সম্পাদনা]বাঙালির অতিথি আপ্যায়নের এই রীতি বেশ পুরনো। গোটা বাংলায় প্রায় ২৫০০ কদমা বাতাসা ও নকুলদানা তৈরির ছোট ‘কারখানা’ রয়েছে। বর্ধমানের নীলপুর, মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর, গড়িয়া-বেলেঘাটা, উত্তরবঙ্গের বালুরঘাটে প্রচুর কারিগর বাতাসা-নকুলদানা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। দেশ জুড়েই ভাল চাহিদা থাকা সত্বেও বাতাসা-নকুলদানা-কদমাকে তেমন ভাবে বাজারজাত করা যাচ্ছে না। তবে এই প্রাচীন কুটির শিল্পের হাল ফেরাতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার আসরে নেমেছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ক্লাস্টার তৈরি-করে রপ্তানি করার বিভিন্ন পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মনাকরের কদমার বাজার চাহিদা বেশি। এখানকার কদমা-শিল্পের নিজস্ব ইতিহাসও রয়েছে। মানকরের কারিগরেরা কদমা বিভিন্ন রাজ্যে রপ্তানি করেন। কিন্তু কারিগরের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাওয়ায় কদমা-শিল্প বর্তমানে মার খাচ্ছে বলে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ভিন রাজ্যের বাজারে পাঠানোর ব্যবস্থা নেই। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দপ্তরের কর্তারাও এই বিষয়ে তাদের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।[২]
পরিকল্পনা
[সম্পাদনা]পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসরকারের খাদি গ্রামদ্যোগের উদ্যোগে ক্লাস্টার তৈরি করে কারিগরদের এক ছাদের তলায় এনে প্রথমে ছোটছোট ‘হাব’ তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেখানেই আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে কারিগরদের। উদ্যগতাদের অভিমত, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশে বাতাসা্ কদমা এবং দেশের দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে নকুলদানার চাহিদা রয়েছে। হাবে তৈরি হওয়া কদমা নকুললদানা বাতাসা আধুনিক প্রযুক্তিতে প্যাকেটজাত করে রপ্তানি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলত কারিগর ও ব্যবসায়ী, উভয় পক্ষই লাভবান হবেন বলে মনে করছেন খাদি গ্রামোদ্যোগের কর্তারা।[২]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ evergreenbangla.com অভিধানে কদমা ভুক্তি[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ গ আনন্দবাজার (১৫ আগস্ট ২০১৬)। "কদমা, বাতাসা শিল্পের দিন ফেরাতে ক্লাস্টারের ভাবনা"।
- ↑ সংসদ অভিধানে কদমা ভুক্তি[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "রেসিপি : মুখরোচক কদমা ও বাতাসা (ভিডিওসহ)"। কালের কণ্ঠ। ২২ মে ২০১৭। ৩০ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ২৪ ঘণ্টা (৭ অক্টোবর ২০১৪)। "লক্ষ্মীপুজো স্পেশাল: ক্ষীরকদম"।