কোলমার
কোলমার | |
---|---|
প্রেফেকত্যুর এবং কোম্যুন | |
স্থানাঙ্ক: ৪৮°০৪′৫৪″ উত্তর ৭°২১′২০″ পূর্ব / ৪৮.০৮১৭° উত্তর ৭.৩৫৫৬° পূর্ব | |
দেশ | ফ্রান্স |
নগরের পৌরসভা | কোলমার-রিবোভিলে |
ক্যান্টন | কোলমার-১ এবং কোলমার-২ |
আন্তঃগোষ্ঠী | কলমার অ্যাংলোমেইরেশন |
সরকার | |
• মেয়র (২০১৪–২০২০) | গিলবার্ট মেয়ের |
আয়তন১ | ৬৬.৫৭ বর্গকিমি (২৫.৭০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (2016.01.01)টেমপ্লেট:ফ্রান্স মেটাডেটা উইকিউপাত্ত | ৬৯,৮৯৯ |
• জনঘনত্ব | ১,১০০/বর্গকিমি (২,৭০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | সিইটি (ইউটিসি+০১:০০) |
• গ্রীষ্মকালীন (দিসস) | সিইএসটি (ইউটিসি+০২:০০) |
আইএনএসইই/ডাক কোড | ৬৮০৬৬ /৬৮০০০ |
ফোন কোড | ০৩৮৯ |
উচ্চতা | ১৭৫–২১৪ মি (৫৭৪–৭০২ ফু) (avg. ১৯৭ মি অথবা ৬৪৬ ফু) |
১ ফ্রান্সের ভূমি রেজিস্টার তথ্য, যার ভেতর হ্রদ, পুকুর, হিমবাহ > ১ বর্গকি.মি.২(০.৩৮৬ বর্গ মাইল বা ২৪৭ একর) এবং নদীর মোহনা অন্তর্ভূক্ত নয়। |
কোলমার (ফরাসি: Colmar; উচ্চারণ: [kɔlmaʁ]) উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের গ্রঁতেস্ত (Grand Est) রেজিওঁ বা প্রশাসনিক অঞ্চলের ও-রাঁ (Haut-Rhin) দেপার্তমঁ বা জেলাতে অবস্থিত একটি শহর। এটি স্ত্রাসবুর (Strasbourg) শহর থেকে ৬৮ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে, রাইন নদী থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে ফ্রান্স-জার্মান সীমান্তের কাছে, ভোজ (Vosges) পর্বতমালার পাদদেশ থেকে কয়েক কিলোমিটার পূর্বে, ইল নদীর উপনদী লখ নদীর (Lauch) উপরে অবস্থিত। স্ত্রাসবুর থেকে মুলুজ (Mulhouse) শহর হয়ে সুইজারল্যান্ডের বাজেল (Basel) শহরে যাওয়ার মূল রেলপথের উপর কোলমার শহরটির অবস্থান।
কোলমার শহরটি ফ্রান্সের আলজাস নামক প্রাক্তন প্রশাসনিক অঞ্চলের আঙুরচাষ অঞ্চলটির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং এটি আঙ্গুর থেকে বানানো মদ তথা ওয়াইনের একটি অন্যতম বাজার। কোলমার একটি নদীবন্দরও। এটি অনেকগুলি খালের মাধ্যমে রাইন নদীর সাথে সংযুক্ত।
পশ্চিম ইউরোপের সম্রাট শার্লমাইনের (৮০০-৮১৪) স্যাক্সন যুদ্ধসমূহের একটি ঘটনাপঞ্জিতে প্রথম কোলমার শহরের উল্লেখ পাওয়া যায়। ১২২৬ সালে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট ২য় ফ্রেডেরিক কোলমার শহরটিকে একটি সাম্রাজ্যিক শহরের মর্যাদায় উন্নীত করেন। এসময় শহরের চারপাশে প্রতিরক্ষা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। ১২৭৮ সালে হাবসবুর্গের রুডলফ শহরটিকে নাগরিক অধিকার প্রদান করেন। ১৬৩২ সালে তিরিশ বছরের যুদ্ধ চলাকালীন সময় শহরটি সুইডেনের দখলে ছিল। ১৬৩৫ সালে ফ্রান্সের রাজা ১৩শ লুই শহরটিকে প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে ১৬৪৮ ও ১৬৭৮-এর মধ্যবর্তী যুগে শহরটি ধীরে ধীরে ফ্রান্সের অধিকৃত হয়ে যায়। এর পরে জার্মানি দুইবার কোলমার শহরটিকে তার দখলে নেয়। প্রথমবার ১৮৭১ থেকে (অর্থাৎ ফ্রান্স-জার্মান যুদ্ধের পর থেকে) ১৯১৯ সাল পর্যন্ত (অর্থাৎ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত) এবং এর পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আরও একবার।
বহু ফোয়ারা, প্রাচীন গির্জা এবং আলজাসীয় পুনর্জন্ম বা রনেসঁস-শৈলীর ভবনগুলির জন্য কোলমার বর্তমানে একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। কোলমারের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে ১২শ-১৩শ শতকে নির্মিত সাঁ-মারতাঁ কলেজীয় গির্জা, যার ভেতরে ১৪৭৩ সালে মার্টিন শোনগাউয়ারের আঁকা কুমারী মেরির একটি চিত্রকর্ম আছে, যার নাম লা ভিয়ের্জ ও বুইসোঁ দ্য রোজ (la Vierge aux buissons de roses, অর্থাৎ “গোলাপের ঝাড়সহ কুমারী মেরি”)।
এছাড়াও আছে মুজে দুন্তেরলিন্দন (Musée d’Unterlinden) (অতীতে যা ডোমিনিকান সন্ন্যাসীদের একটি প্রাচীন মঠ বা বিহার ছিল) নামের জাদুঘর। এখানে ধর্মভিত্তিক জার্মান চিত্রশিল্পী মাটিয়াস গ্রুনেভাল্ডের (Matthias Grünewald; আসল নাম Matthis Gothardt Nithardt) সেরা চিত্রকর্ম ১৬শ শতকে (আনুমানিক ১৫১২ থেকে ১৫১৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে) অঙ্কিত ইসেনহাইম (Issenheim) নামক বেদিচিত্রটি সংরক্ষিত আছে। প্যারিসের বাইরের জাদুঘরগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর্শনাথী লাভ করে এই জাদুঘর (বছরে ৩ লক্ষেরও বেশি)। এতে আরও আছে আনুমানিক ১৪৭০ সালে মার্টিন শোনগাউয়ারের অঙ্কিত অর্লিয়ে (Orlier) বেদীচিত্র, গথিক যুগের শেষের দিকের স্তফেনবের্গ (Stauffenberg) বেদিচিত্র, আনুমানিক ১৪৯৫ সালে আঁকা সাঁত কাতরিন (Sainte Catherine) বেদিচিত্র, আনুমানিক ১৪৬৫ সালে গাসপার ইজেনমানের (Gaspard Isenman) আঁকা সাঁ-মারতাঁ কলেজীয় গির্জার বেদিচিত্র এবং আনুমানিক ১৪৭০-১৪৮০ সালে আঁকা কোলমার শহরের ডোমিনিকানদের আঁকা বেদিচিত্রগুলি। এই জাদুঘরের আরেকটি অন্যতম আকর্ষণ হল স্পেনীয় চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর বিখ্যাত চিত্রকর্ম গের্নিকা-র (La Guernica) পশমের নকশীকাঁথায় করা প্রতিলিপি, যেটি পিকাসো নিজেই স্থানীয় এক দম্পতিকে তৈরি করার অনুরোধ করেছিলেন। সারা বিশ্বে গের্নিকা-র এরকম মাত্র তিনটি প্রতিলিপি আছে।
নিউ ইয়র্ক শহরের বিখ্যাত স্ট্যাচু অফ লিবার্টির (Statue of Liberty) অর্থাৎ “মুক্তির মূর্তি”-র ভাস্কর ফ্রেদেরিক-ওগুস্ত বার্তোল্দি (Frédéric-Auguste Bartholdi) ১৮৩৪ সালে কোলমার শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার বাসভবনটিকে বর্তমানে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
কোলমার ওয়াইন বা আঙ্গুরের সুরার একটি বাণিজ্যকেন্দ্র। এটি আলজাসের ওয়াইন পথের উপর অবস্থিত এবং এর জনগণ নিজশহরকে আলজাসীয় ওয়াইনের রাজধানী (capitale des vins d'Alsace কাপিতাল্ দে ভাঁ দালজাস্) নামে ডেকে থাকে। শহরটি রাইন নদীর তীরে অবস্থিত শিল্পবন্দর নোফ-ব্রিজাক (Neuf-Brisach)-এর সাথে সংযুক্ত। মূলত বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সুবাদে এখানে সাম্প্রতিককালে শিল্পায়ন ঘটে। প্রচলির শিল্পগুলির মধ্যে আছে সূক্ষ্ম কারিগরি প্রকৌশল, কৃত্রিম তন্তু ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি উৎপাদন, ইত্যাদি। বহুসংখ্যক জাপানি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উপস্থিতির কারণে প্রতিবেশী ছোট শহর কিন্ৎসহাইমে (Kientzheim) একটি জাপানি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, যার নাম লিসে সেইজো (Lycée Seijo অর্থাৎ সেইজো উচ্চবিদ্যালয়)। কোলমার একটি খুচরা ক্রয়-বিক্রয় ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এখানে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কর্মকাণ্ড উন্নতিলাভ করেছে (বিশেষ করে কৃষিজীববিজ্ঞান ক্ষেত্রে)। মূল শহরে প্রায় ৭০ হাজার এবং বৃহত্তর নগর এলাকাতে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার লোকের বাস।