ফকার
ফকার একটি ওলন্দাজ বিমান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম। প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্থনি ফকারের নামানুসারে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়। এযাবৎ প্রতিষ্ঠানটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জার্মানিতে ১৯১২ সালে ব্যবসা পরিচালনা শুরু করে, পরে ১৯১৯ সালে স্থানান্তরিত হয় নেদারল্যান্ডে। প্রতিষ্ঠানটির সর্বাধিক ব্যবসা সফল কাল ছিল ১৯২০ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত - এসময়ে বেসামরিক বিমানের বাজার একচেটিয়া ভাবে ফকারের দখলে ছিল। ১৯৯৬ সালে ফকার দেউলিয়া ঘোষিত হয়।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]ফকার ২০ বছর বয়সে তৈরি করেন তার প্রথম বিমান, স্পিন (স্পাইডার)। এটাই ছিল নেদারল্যান্ডের আকাশে ওড়া প্রথম ওলন্দাজ নির্মিত বিমান। তবে সমকালীন জার্মানীতে অধিক সুযোগ সুবিধা থাকায় ১৯১২ সালে ফকার বার্লিনে চলে যান এবং সেখানেই তার প্রথম কোম্পানী, Fokker Aeroplanbau, স্থাপন করেন। আবার কিছুদিন পরেই তিনি Schwerin এর দক্ষিণে Görries উপশহরে কাজ কর্ম সরিয়ে নিয়ে যান এবং বর্তমান প্রতিষ্ঠানটি, Fokker Aviatik GmbH, প্রতিষ্ঠা করেন ১৯১২ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারিতে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
[সম্পাদনা]ফকার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান সরকারের কাছে প্রচুর সংখ্যক ফকার স্পিন মনোপ্লেন বিক্রয়ের মাধ্যমে যথেষ্ট ভাল ব্যবসা করতে সক্ষম হন এবং সুযোগসন্ধানী ফকার জার্মানীতেই কারখানা বসিয়ে জার্মান সেনাবাহিনীকে যোগান দেয়ার মত প্রচুর বিমান তৈরি করার ব্যবস্থা করেন। তবে জার্মানদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা প্রথম বিমান ছিল ফকার এম৫ যা কিনা আসলে Morane-Saulnier G নামের বিমানের প্রায় হুবহু নকল। Morane-Saulnier G এর ডিজাইনে সামান্য কিছু পরিবর্তন সাধন করেই ফকার এম৫ তৈরি করা হয়। এই বিমানের উপর মেশিন গান বসালে খুব ভাল ফলাফল পাওয়া যেতে পারে, এই বিষয়টি অনুধাবন করে বিমানের সামনের দিকে মেশিন গান বসানর ব্যবস্থা করা হয়। মেশিন গানের সাথে বিমানের প্রপেলারের তাল ঠিক রাখার জন্য ফকার বিশেষ ধরনের synchronization gear তৈরি করেন, যা ছিল ফ্রানৎস শ্নাইডার এর প্যাটেন্ট করা যন্ত্রের একটি উন্নত সংষ্করণ। মেশিন গান সংবলিত এই নতুন ফকার মডেলের নাম দেয়া হয় Fokker Eindecker এবং খুব দ্রূতই তা সমগ্র পশ্চিম রণাঙ্গনে আতঙ্ক সঞ্চচারকারী যুদ্ধ বিমান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ব্রিটিশ Nieuport 11 এবং Airco DH.2 প্রভৃতি যুদ্ধ বিমান আকাশে না ওড়া পর্যন্ত আকাশের কর্তৃত্ব ফকার তথা জার্মানদেরই দখলে থাকে। এদিকে ফ্রানৎস তার প্যাটেন্ট করা যন্ত্রাংশ বিনা অনুমতিতে ব্যবহারের জন্য আদালতে ফকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং সেই মামলায় জয়লাভ করেন। কিন্তু ফকার কৌশলে শাস্তি এড়িয়ে যান।
এইন্ডেকারের বাইপ্লেন স্কাউট সংষ্করণ বের হবার পর তার ডিজাইনে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা প্রকট হয়ে ওঠে এবং ফকারের প্লেনগুলো প্রতিযোগীতার বাজারে পিছিয়ে পড়তে থাকে । এসময় ফকার জার্মান সরকারের মাধ্যমে বল প্রয়োগ করে জাঙ্কারস নামক একটি বিমান নির্মাতা কোম্পানির সাথে একীভূত হন। জাঙ্কারসের কাছে তখন thicker high lift airfoil সমৃদ্ধ ভাল কিছু বিমানের ডিজাইন ছিল । জাঙ্কারসের aerodynamic গবেষণা কর্মের ফলাফল হস্তগত হওয়ার পর ফকার আবার সরকারের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে একীভূত কোম্পানিটি ভেঙ্গে ফেলেন এবং জাঙ্কারসের উন্নততর ডিজাইন ব্যবহার করে বিমান বানান শুরু করেন। এমন কিছু বিমান হল ফকার ডি৬, ড.আই ড্রেইডেকার, ফকার ডি৭ এবং ফকার ডি৮।
নেদারল্যান্ডসে প্রত্যাবর্তন
[সম্পাদনা]বিশাল অঙ্কের আয়কর (১,৪২,৫০,০০০ মার্ক) অপোরিশধিত রেখেই ফকার ১৯১৯ সালে নেদারল্যান্ড্সে ফিরে যান এবং Steenkolen Handels Vereniging (SHV Holdings নামে এখন পরিচিত) এর সহযোগীতায় অ্যামস্টারডামের কাছে একটি নতুন কোম্পানি খুলেন। কোম্পানির নাম দেয়া হয় Vliegtuigenfabriek (ওলন্দাজ আকাশযান কারখানা), ফকার নামটি খুব সতর্কভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তার ভূমিকার কারণে। ভার্সেলির চুক্তির কঠোর শর্তাবলী সত্ত্বেও ফকার একেবারে খালি হাতে ফেরেননি; প্রচুর বিমানের যন্ত্রাংশ এবং একটি আস্ত বিমান রপ্তানী করে নেদারল্যান্ড্সে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি তিনি জোগাড় করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল ফকার ১১৭ সি১ এবং অন্যান্য ১৮০ রকমের বিমানের যন্ত্রাংশ। ১৯১৯ সালে ছয়টি রেলগাড়ি ভর্তি হয়ে জার্মান-ওলন্দাজ সীমান্ত অতীক্রম করে এইসব যন্ত্রপাতি। শুরুতেই এরকম বিশাল মজুদ থাকায় ফকার দ্রূতই নতুন করে আবার ব্যবসা গুছিয়ে নিতে সক্ষম হন।
কোম্পানি খোলার অল্প দিনের মধ্যেই প্রচুর সংখ্যক ফকার সি১ এবং সি৪ মডেলের সামরিক বিমান সরবরাহ করেন রাশিয়া, রুমানিয়া এমনকি গোপনে জার্মান বাহিনীকেও । বেসামরিক বাজারেও সাফল্য আসে, ফকার এফ৭ তৈরির পর । ফকার এফ৭ ছিল একাধিক বিভিন্ন রকম ইঞ্জিন ব্যবহারে সক্ষম ভারী ডানা বিশিষ্ট বিমান। তবে পরবর্তীতেও ফকার সামরিক বিমান পরিকল্পনা এবং নির্মাণ চালিয়ে যান এবং এইসব বিমানের মূল ক্রেতা ছিল ওলন্দাজ বিমান বাহিনী। বিদেশী ক্রেতাদের মধ্যে ছিল ফিনল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, হাঙ্গেরি এবং ইতালি। প্রত্যেকেই প্রচুর সংখ্যক ফকার সি৫ মডেলের বিমান কেনে, যা ছিল মূলত জরিপ এবং অনুসন্ধানের কাজে ব্যবহার করার মত বিমান, যুদ্ধের উপযোগী নয়। এই মডেলটিই পরে বিশ এবং ত্রিশের দশকে ফকারের প্রধান সাফল্য হিসেবে দেখা দেয়।
১৯২০ থেকে ১৯৩০ : ফকারের স্বর্ণযুগ
[সম্পাদনা]দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধ
[সম্পাদনা]এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |