শহিদুল হক ভূঁইয়া
শহিদুল হক ভূঁইয়া | |
---|---|
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
শহিদুল হক ভূঁইয়া (জন্ম:২৫ই অক্টোবর ১৯৪০) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১][২]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]শহিদুল হক ভূঁইয়ার জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার তন্তর গ্রামে। তার বাবার নাম সুন্দর আলী ভূঁইয়া এবং মায়ের নাম কর্ফুলের নেছা। তার স্ত্রীর নাম বকুল বেগম। তাদের পাঁচ মেয়ে, এক ছেলে।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]শহিদুল হক ভূঁইয়া চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানের শিয়ালকোটে। ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটিতে বাড়িতে আসেন। মার্চ মাসের মাঝামাঝি ঢাকা সেনানিবাসের ট্রানজিট ক্যাম্পে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সেখান থেকে পালিয়ে নিজ এলাকায় এসে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর ভারতে যান।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত চন্দ্রপুর-লাতুমুড়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা। এই প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল বেশ সুবিধাজনক স্থানে। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে সেখানে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করলেন শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে। তাদের সঙ্গে ছিলো মিত্র বাহিনীও। তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকল। শহিদুল হক ভূঁইয়া মুক্তিবাহিনীর অবজারভার। তিনি দূরবর্তী স্থানে থাকা যৌথ বাহিনীর গোলন্দাজ (আর্টিলারি) দলকে বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে গ্রিড রেফারেন্স (শত্রুর অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য) জানাচ্ছেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোলন্দাজ দল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে গোলা ফেলছে। ভোর থেকে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলল। কিন্তু মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে সাঁড়াশি আক্রমণ করেও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তেমন ক্ষতি করতে পারল না। বরং তাদেরই ক্ষয়ক্ষতি হলো ব্যাপক। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সেনারা দিশেহারা। এমন অবস্থায় তাদের পশ্চাদ্পসরণের নির্দেশ দেওয়া হলো। তার বেতারযন্ত্রেও এল সেই নির্দেশ। সে সময় শহিদুল হক ভূঁইয়া মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধক্ষেত্রের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট খন্দকার আজিজুল ইসলামের পাশে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙ্কার উঁচু স্থানে। সেখান থেকে বৃষ্টির মতো দূরপাল্লার গুলি ছুটে আসছে। শহিদুল হক ভূঁইয়া বেতারযন্ত্রে কথা বলছেন, এমন সময় তার চোখের সামনে খন্দকার আজিজুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। সঙ্গে সঙ্গে নিভে গেল তার প্রাণবায়ু। শহীদ হলেন তিনি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও মুক্তিযোদ্ধাদের সামান্য যে মনোবল ছিল, এরপর তা-ও ভেঙে পড়ল। যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ চলে গেল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়। মিত্রবাহিনীর একজন কোম্পানি কমান্ডার (শিখ মেজর), তিনজন জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারসহ ৪৫ জন এবং মুক্তিবাহিনীর লেফটেন্যান্ট খন্দকার আজিজুল ইসলামসহ ২২ জন শহীদ হন। আহত হন অসংখ্য। পরে আহত ও শহীদদের মরদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে শহীদ হন আরও কয়েকজন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২৫-০৬-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
পাদটীকা
[সম্পাদনা]- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।