কাজী সাজ্জাদ আলী জহির
কাজী সাজ্জাদ আলী জহির | |
---|---|
জন্ম | ১১ এপ্রিল, ১৯৫১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীরপ্রতীক স্বাধীনতা পদক (২০১৩) পদ্মশ্রী (২০২১) |
লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (জন্ম: ১১ এপ্রিল, ১৯৫১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরপ্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১] ২০২১ সালে গণ-বিষয়ক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার জন্যে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]মুক্তিযোদ্ধা কাজী সাজ্জাদ আলী জহিরের জন্ম কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার চৌসই গ্রামে। জন্ম ১৯৫১ সালের ১১ এপ্রিল। বাবা কাজী আবদুল মুত্তালিব। মা কাজী নূরুন্নাহার বেগম।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]সাজ্জাদ আলী জহির ১৯৬৯ সালের শেষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাকুল সামরিক অ্যাকাডেমিতে সিনিয়র ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আগস্ট মাসের শেষে তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে এসে যুদ্ধে যোগ দেন। [২]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
[সম্পাদনা]তিনি সিলেট অঞ্চলে ৪ নম্বর সেক্টরের অধীনে দ্বিতীয় গোলন্দাজ বাহিনীকে সংগঠিত করেন। আগস্ট মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কমিশন লাভ করেন সাজ্জাদ আলী জহির। পোস্টিং হয় ৭৮ ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্ট শিয়ালকোটে। কয়েক দিন পর সেখান থেকে পালিয়ে ভারতে যান। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন সেপ্টম্বর মাসে। এ সময় ভারত সরকার মুক্তিবাহিনীকে কয়েকটি ১০৫ এমএম গান দেয়। তা দিয়ে মুক্তিবাহিনীর জন্য একটি ফিল্ড আর্টিলারি ব্যাটারি গঠন করা হয়। এর নাম দেওয়া হয় রওশন আরা ব্যাটারি। এই ব্যাটারিতে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। এ গ্রুপের সহঅধিনায়ক ছিলেন তিনি। রওশন আরা ব্যাটারিতে ছিল ছয়টি গান। অক্টোবর মাস থেকে এই ব্যাটারি ১০৫ এমএম কামান দিয়ে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সকে বিভিন্ন যুদ্ধে আর্টিলারি ফায়ার সাপোর্ট দিয়ে সহায়তা করে। সাজ্জাদ জহিরের পরিচালনায় রওশন আরা ব্যাটারি কয়েকবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে গোলাবর্ষণ করে। সঠিক নিশানায় গোলাবর্ষণ করার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট কৃতিত্ব ও দক্ষতা প্রদর্শন করেন। এর ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]- বীরপ্রতীক
- স্বাধীনতা পদক ২০১৩
- পদ্মশ্রী ২০২১[৪] - প্রথম ও একমাত্র বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে তিনি এই সম্মান পান।
গ্রন্থ রচনা
[সম্পাদনা]সাজ্জাদ আলী জহির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা গ্রন্থ রচনায় খ্যাতি অর্জন করেছেন। পাঁচজন বীরশ্রেষ্ঠের জীবনী লেখা তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তিনি প্রায় ৫৪টি গ্রন্থ রচনা করেন।[৫] এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- মুক্তিযুদ্ধের চিত্র কাহিনি
- রংপুর সেনানিবাসে দু:সাহসিক আক্রমণ
- মুক্তির সংগ্রামে মেহেরপুর
- মুক্তির সংগ্রামে চাপাইনবাবগঞ্জ
- মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস: সিলেট
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১৩-০৭-২০১২"। ২০১৭-০৩-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৯৫। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ৩২৯। আইএসবিএন 9789849025375।
- ↑ "সনজীদা খাতুন ও সাজ্জাদ আলী জহির পাচ্ছেন ভারতের 'পদ্মশ্রী'"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২৫ জানুয়ারি ২০২১। ২৫ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০২১।
- ↑ "দুই গুনী পেলেন ভারতের 'পদ্মশ্রী'"। চলতি ঘটনা। আব্দুল কাইয়ুম: ৩। ২০২২।
পাদটীকা
[সম্পাদনা]- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।