হালিমা আস সাদিয়া
হালিমা আস-সাদিয়া | |
---|---|
মৃত্যু | ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ |
রাজবংশ | বনু সা'দ |
হালিমা বিনতে আবি যুয়ায়েব বা হালিমা সাদিয়া (আরবি: حليمة السعدية) ছিলেন ইসলামের নবী মুহাম্মদের দুধমা। ৮দিন বয়সে তিনি মুহাম্মদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, এবং দুই বছরের কিছু অধিক সময় পর্যন্ত তাকে হালিমা তার নিজ বাড়িতে লালন-পালন করে, তার মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন।
মুহাম্মাদকে গ্রহণ
[সম্পাদনা]আরব সমাজে তখন এক গোত্রের শিশুকে ভিন্ন গোত্র বাল্যকালে লালন পালনের জন্য পাঠাতো হত যাতে তারা বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জলভাষী হতে পারে। সেই হিসাবে হালিমা ও তার গোত্র আরবের কুরাইশ গোত্রের নিকট গিয়েছিল যাতে কোন সন্তান লালন-পালনের জন্য পাওয়া যায় কিনা।
“ | হালিমা আস সাদিয়া বর্ণনা করেন, সে বছর ছিল অনাবৃষ্টি ও দুর্ভিক্ষের বছর। আমি বনু সাদ গোত্রের আরো দশজন মহিলার সাথে সাদা রঙের একটি দুর্বল মাদি গাধার উপর সওয়ার হয়ে দুগ্ধপোষ্য শিশুর খোঁজে বের হলাম। আমাদের সাথে একটা বুড়ো মাদি উটও ছিল। আল্লাহর কসম! তার ওলান থেকে একটু দুধও বের হচ্ছিল না। ক্ষুধার জ্বালায় আমাদের শিশুদের কান্নাকাটির কারণে আমরা রাতে মোটেও ঘুমোতে পারতাম না। আমার বুকের ও আমাদের উটনীর দুথে আমার শিশু পুত্র আবদুল্লাহর পেট ভরতো না। তবে আমরা বৃষ্টি ও সচ্ছলতার আশা করতাম। অবশেষে আমরা মক্কায় পৌঁছলাম। আমাদের প্রত্যেকের সামনে শিশু মুহাম্মাদকে উপস্থাপন করা হলো। তিনি ইয়াতীম শিশু একথা শোনার পর কেউ আর তাঁকে নিতে আগ্রহ দেখালো না। কারণ আমরা শিশুর পিতা-মাতার নিকট থেকে ভালো কিছু লাভের আশা করতাম। আমরা বলাবলি করতাম : শিশুটি ইয়াতীম। তার মা ও দাদা তেমন কী আর দিতে পারবে? এ কারণে আমরা তাকে অপছন্দ করলাম। এই দলের মধ্যে একমাত্র আমি ছাড়া আর সবাই লালন-পালনের জন্য শিশু পেয়ে গেল। যখন আমরা আমাদের গোত্রে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম তখন আমি আমার স্বামীকে বললাম : আল্লাহর কসম! অন্যরা এতিম লালন-পালনের জন্য শিশু নিয়ে ফিরবে আর আমি শূন্য হাতে ফিরবো, এটা আমার পছন্দ নয়। আমি এই হাশিমী ইয়াতীম শিশুটির নিকট যাব এবং তাকেই নিয়ে ফিরবো। আমার স্বামী বলল, ঠিক তুমি তাই কর, হতে পারে এর মধ্যেই আমাদের বরকত রয়েছে। অতপর তিনি মুহাম্মাদ (সঃ) কে গ্রহণ করলেন এবং তাকে নিয়ে সেখান থেকে রওয়ানা হলেন [১] | ” |
ইসলাম গ্রহণ
[সম্পাদনা]হালিমা বিনতে আবি যুবায়েবের ইসলাম গ্রহণ বিষয়ে অধিকাংশ আলেমগন ঐকমত্য প্রকাশ করেছেন। [২] এছাড়াও তার স্বামী ও সন্তানেরা সবাই ইসলাম গ্রহণ করে।[৩]
সন্তানাদি
[সম্পাদনা]হালিমার স্বামীর নাম হারিস ইবনে আবদিল উযযা ইবনে রিফায়া আস সাদি। এদের সন্তানরা হলেন :
- আবদুল্লাহ
- উনাইসা ও
- আশ শায়মা অথবা খুযাইমা মতান্তরে হুযাফা। মুহাম্মাদ ও আবদুল্লাহ একই সাথে দুধ পান করেন।[৪]
মুহাম্মাদ চাচাতো ভাই আবু সুফিয়ান ইবনে হারিসকেও হালিমা দুধ পান করান।[৫] এবং হামযাকে একদিন দুধ পান করান।[৬][৭]
হালিমা ও মুহাম্মাদ
[সম্পাদনা]মুহাম্মাদ তার দুধ মাতা হালিমাকে সবসময় সশ্রদ্ধ সম্মান করতেন।[৮] একবার নিজের চাদরে তাকে বসতে দিয়েছিলেন।[৯][১০][১১] তাকে বিভিন্ন অভাবের সময় উপকৌঠন পাঠিয়েছেন। একবার খাদিজা তাকে ৪০টা ছাগল ও একটি উট দান করেছিলেন।[১২][১৩]
বর্ণিত রয়েছে,মুহাম্মাদ হালিমার ঘরে লালিত পালিত হওয়ার কারণেই অন্ত্যন্ত বিশুদ্ধভাষী ছিলেন।[১৪][১৫] এই হালিমা সাদিয়ার ঘরে অবস্থান কালেই মুহাম্মাদ এর প্রথম বক্ষ বিদারণের ঘটনা ঘটে।[১৬][১৭][১৮]
ইবনে ইসহাক বলেন, শিশু মুহাম্মাদকে নিয়ে একবার যখন হাবশায় যান। সেখানে এক খ্রিষ্টান আলেম মুহাম্মাদকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলেন,এই বালক ভবিষ্যতে বড় কিছু হবে।[১৯]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]আহমাদ যীনী দাহলাম বলেছেন, তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, মদিনায় হিজরত করে সেখানে ৮ম হিজরিতে মৃত্যু বরণ করেন, জান্নাতুল বাকী গোরস্তানে দাফন করা হয়।[২০] তবে বালাযুরীর বলেছেন,হালিমা মদিনায় হিজরত করেননি এবং মক্কা বিজয়ের পূর্বে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।[২১]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ [আনসার আল-আশরাফ -১/৯৩-৯৪]।
- ↑ [আস-সারাহ আল-হালাবিয়্যা-১/৩২]।
- ↑ [নিসা মিন ’আসর আন-নুবুওয়াহ্, পৃ.১৫,]।
- ↑ [প্রাগুক্ত; আনসাবুল আশরাফ -১/৯০-৯১]।
- ↑ [সীরাতু ইবন হিশাম-১/১৬১; টীকা নং-৬]।
- ↑ [রিজানুল মুবাশশিরূন বিল জান্নাহ-১/৭, ২/১৮৯]।
- ↑ [নিসা’ মিন আসর আন-নুবুওয়াহ পৃ. ১১]।
- ↑ [উসুদুল গাবা-৫/৪২৮]।
- ↑ [তাবাকাত-১/১১৪]।
- ↑ [আশ-শিফা-১/২৬০]।
- ↑ [আল-ইসী‘আব-৪/২৬২]।
- ↑ [নিসা’ মুবাশশারাত বিল জান্নাহ্-১/৩২]।
- ↑ [আনসাবুল আশরাফ-১/৯৫]।
- ↑ [ইবন কাছীর, আস-সীরাহ্ আন-নাবাবিয়্যা-১/১১৫]।
- ↑ [আস-সীরাহ্ আল-হালাবিয়্যা-১/১৪৬]।
- ↑ [সহীহ মুসলিম-১/১০১]।
- ↑ [ইবন কাছীর, আস-সীরাহ্-১/১৩]।
- ↑ Barkatullah, Abid। "প্রথম বক্ষ বিদারণ | নবীজি সা." (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৩-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৯।
- ↑ [সীরাতু ইবন হিশাম-১/১৬৭]।
- ↑ [নিসা‘ মিন ‘আসর আন-নুবুওয়াহ্, পৃ.১৭]।
- ↑ [আনসাবুল আশরাফ, পৃ.৯১]।